পোস্টগুলি

History লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

প্রশান্ত বুদ্ধ

ছবি
  কিভাবে বুদ্ধের শিক্ষা ও দর্শন এত দ্রুত সারা দুনিয়া ছড়িয়ে যায়, কি কারণে  বুদ্ধ নিষ্কণ্টকভাবে  ধর্ম প্রচার করতে পেরেছিলে্‌ন,  আর কেনইবা তার ধর্ম-দর্শন  সারা পৃথিবীতে সগৌরবে বিরাজ করলেও জন্মভূমি ভারতবর্ষে মিইয়ে গেছে? বুদ্ধ ছিলেন রাজপুত্র।  তিনি পেয়েছিলেন তৎকালীন এ এলাকার সমস্ত রাজাদের আনুকূল্য। সর্বভারতীয় সম্রাট অশোক,   মগধের রাজা বিম্বিসার, কৌশল্যের  রাজা প্রসেনজিৎ,  সাচি ও বারহুতের শাসনকর্তা, রাজা মিনান্দারসহ   উত্তর-পশ্চিম ভারতের গ্রিক বংশদ্ভুত  শাসকগণ  সকলেই উদারভাবে বুদ্ধের মত গ্রহণ করেছে ও প্রচারে সাহায্য করেছে।  স্বাভাবিকভাবেই,  বুদ্ধের বাবা ও তার সমসাময়িক রাজাগণ সকলে উদার চিত্তে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং এ ধর্মের মহিমা প্রচার করেন । কুষাণ  সম্রাট কনিষ্কের চেষ্টায় প্রথম শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্ম পৌঁছে যায় কাশ্মীর, ইরান,  আফগানিস্তানের কাছাকাছি। শীঘ্রই চীনসহ মধ্য এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে বৌদ্ধধর্ম।  সম্রাট অশোক শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া,  লাউস, থাইল্যান্ডবাসীদের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পাঠান । আজ থেকে ১...

মসলাদার ইতিহাস

ছবি
  উপনিবেশায়নের ইতিহাস রক্তাক্ত। তবে ভারতীয় উপমহাদেশসহ পূর্ব-ভারতীয় দীপপুঞ্জ অঞ্চলের উপনিবেশায়নের ইতিহাস শুধুমাত্র রক্তাক্তই নয়– এ ইতিহাস অধিকতর মসলাযুক্ত। আধা কাঁচা, পোড়ানো স্বাদহীন মাংস, মাছ, মদসহ অন্যান্য ইউরোপীয় খাবারের মধ্যে গোলমরিচ ও লবঙ্গের গুড়ো ছিড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা পৃথিবীর ইতিহাসকে গড়ে তুলেছে নতুনভাবে।   কালিকট শুধু ভারতবর্ষের প্রধান বন্দর ছিল না, ছিল ইতিহাসের দরজা। দিনে দিনে কালিকট হয়ে উঠেছিল এক মৌচাক, সারা দুনিয়ায় এর মধুর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। আকারে ছোট হলেও, দুই হাজার বছর ধরে এর বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি গড়ে তুলেছে ভারতবর্ষের দ্বার হিসেবে। প্রধান বাণিজ্য মসলা, ভারতবর্ষের বাইরে মালয়-ইন্দোনেশিয়া হতে উৎপাদিত মসলাও চলে আসতো কালিকটে। এই মশলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ সরাসরি জড়িত ছিল ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের সাথে। নামে ধর্মযুদ্ধ হলেও এ যুদ্ধে বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল আরো বেশি। ধর্ম যুদ্ধের শুরুতে ইউরোপীয় শক্তি সাফল্য লাভ করলেও পরের দিকে ৪র্থ ক্রুসেডে মুসলমানরা বীর সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করে এবং মিশর দখল করে নেয়। ...

ইয়োভাল নো. হারারি কি বলতে চান?

ছবি
  আসলে তিনটা বই এর রিভিউ একসাথে দেয়া যায় না, তাই রিভিউ হিসেবে না দেখে পরিচয় হিসেবে দেখতে পারেন। ইয়োভাল নোয়াহ হারারিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই, তার একটি বই পড়লে বাকি দুইটিও নিজ থেকেই পড়ে নেবেন-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বলছি সেপিয়েন্স, হোমো ডিউস ও ২১ লেসন্স ফর দ্যা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি --এই তিন বই এর কথা। সেপিয়েন্সঃ এটি বহুল পঠিত , প্রচলিত। স্বল্প পরিসরেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। তুলে এনেছেন কিভাবে ধাপে ধাপে মহাবিশ্বে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফ্রিকার জংগল হতে কিভাবে মানুষ কিভাবে সারাদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০হাজার বছর আগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ , ১০ হাজার বছর আগের কৃষি বিপ্লব ও কয়েকশ বছর আগের শিল্পবিপ্লবের হাত ধরেই মানুষ এগিয়েছে। সেপিয়েন্স তার নিজের অগ্রগতির জন্য ধ্বংস করেছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ । তবে তার গল্প তৈরির ক্ষমতার কারণে সংগঠিত হয়ে ছাড়িয়ে গেছে সকল প্রাণিকুলকে, পৃথিবীর শাসক এখন মানুষ। হোমো ডিউসঃ হারারি এ বইতে ভবিষ্যতের মানুষ নিয়ে কিছু আভাস দিয়েছেন । দ্রুত অগ্রসরমান আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স , বায়োটেকনল...

আমার পূর্ব-পুরুষের কথা বলছি

  " আমি কিংবদন্তির কথা বলছি- আমি আমার পূর্ব-পুরুষের কথা বলছি--" তিনি বিস্তৃত ইতিহাসের অত বড় কেউ হয়ত নন, কিন্তু তিনি ছিলেন খন্ডিত ইতিহাসের মহানায়ক। সারাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহাকাব্যে ছোট চরিত্র হলেও, জামালপুর বা বৃহত্তর ময়মনসিংহের ইতিহাসের বীর সিংহপুরুষ। তিনি ১১ নং সেকটরের কোম্পানি কমান্ডার আবু হাসানাত মুক্তা, মুক্তা কমান্ডার বা মুক্তা কোম্পানি নামেই বেশি পরিচিত। জনাব আবু হাসনাত মুক্তার যুদ্ধকালীন বীরত্বের কথাগুলো রুপকথার মত ছড়িয়ে আছে অত্র এলাকার লোকমুখে, ছোটবেলা হতেই হাজারো মানুষের মুখে শুনেছি তার অসীম সাহসী বীরত্বগাথা। তিনি ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের নিমিত্ত ভারতের মহেশপুরে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর কোনরুপ সামরিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পান শুধুমাত্র তার অসীম সাহসীকতা, তেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য। তিনি নিজে একা যান নি, মুক্তিযুদ্ধে তিনি সাথে করে নিয়ে গেছেন আপন দুই ভাই, এবং আমার বাবাসহ আরো তিন কাজিনকে। পাশাপাশি স্কুল কলেজের সহপাঠী,  বন্ধু  ও এলাকার সমবয়সী শতশত যুবককে তার সাথে যুদ্ধ...

ঐতিহাসিক ও দার্শনিক উইল ডুরান্ট এর মূল বক্তব্য

  ইতিহাসে যখনই নির্দিষ্ট অঞ্চলে  অর্থনৈতিক প্রাচুর্য , রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা,  নীতিবোধের উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প সাধনা শক্তিশালী হয়েছে, সেখানেই সভ্যতার বীজ অঙ্কুরোদগমিত হয়ে শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে ও ডালপালা চারদিকে ছড়িয়েছে। আমরা এখন যা করি তা আমাদের মধ্যে এসেছে হাজারো বছরের চর্চা ও পরিবর্তনের  মধ্য দিয়ে। দশ হাজার বছর আগে শিকারী ছিলাম, এখনো দুর্বলদের মেরে আনন্দ পাই। সামনে খাবার পেলে সবকিছু গোগ্রাসে খাই, কারণ এমনটাই করেছে আমাদের পূর্বপূরুষেরা। তারা শিকার বা সামনে কোন খাবার পেলে প্রথমে নিজেদের উদরপূর্তি করত গলা পর্যন্ত। অনেকে খাবার সংগ্রহ করে রাখা বা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করাকে অপমানজনক মনে করত। নানা পর্যায়ে তারা নানা ধরণের খাবার খেয়েছে-তার মধ্যে সবচেয়ে মজাদার হচ্ছে স্বজাতির মাংস। আদিম সমাজ সাম্যবাদী,  জঙ্গলে কেউ খেতে বসলে খাওয়ার আগে চিৎকার করত, যাতে আশে পাশে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে সে খেতে পারে। তারা একে অপরের প্রতি অত্যন্ত বিবেচকের মত আচরণ করত যা সভ্য সমাজে দেখা যায় না। তবে সম্পত্তি সকলের হওয়ায় কেউ কেউ অলস আচরণ করে সুবিধা নেয়ার চেষ্ঠা করত। আদিম সমাজ যতদিন এ সা...

সর্বভারতীয় সাম্প্রদায়িকতার আলোকে দেশভাগ

  দেশে ৪৭ এর দেশভাগের আগের ইতিহাস খুব বেশি চর্চিত হয় না; আমরা জাতি হিসেবে অদূরদর্শী সেটার প্রমান করার জন্য এর বেশি আর কিছু বলা লাগে না। অচর্চিত এ অধ্যায়ের যে অংশটুকু জানি, তা ভালো ভাবে ক্রস-সেকশন করলে দেখা যায়, আমাদের জানা অংশটুকুর বেশিরভাগ গালগল্প বা মিথ। এসব মিথ লিখেছেন ইতিহাসের অংশবিশেষ সময়ের দাপুটে চরিত্র বা তার অনুসারীরা। তাই আমাদের জানায় রয়ে গেছে বিরাট গ্যাপ। কৃষক ও নানা নিম্নবিত্তের সন্তানদের নিয়ে গড়ে উঠা  হিন্দু-মুসলমানদের সামগ্রিক অংশগ্রহণে ১৮৫৭ এর অসাম্প্রদায়িক  সিপাহী বিপ্লব শাসক ইংরেজদের শুধু বিপদেই ফেলেনি, দারূণ এক শিক্ষাও দিয়ে গেছে। ডিভাইড এন্ড রুলের প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে ১৮৭২ সালেই তারা সর্বভারতীয় শুমারি করে বের করে আনে কোন ধর্মের কে, কয়জন, কোথায় কি করেন। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঐসব গরীব কৃষকমজুর নিম্নবর্গের  মনুষ্যসন্তানেরা যাতে অসাম্প্রদায়িকভাবে একজোট হয়ে আরেকটি  বিপ্লব গড়ে না তুলতে পারেন, সে জন্য ইংরেজ এলান অক্টাভিয়ান হিউমের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় ভারতীয় কংগ্রেস।  ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের ধরে এনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জায়গায় বসিয়ে ঐ...

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

  ন্যাড়া একবিকেলে  বেলতলায় গেল। যদি ন্যাড়ার মাথায় বেল পড়ে , সে পরপারে চলে যাবে। কিন্তু ঐ সুন্দর বিকেলে কোন এক ন্যাড়ির সাথে দেখা হয়ে গেলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যাবে।  তারা এরপর সন্তান সন্ততিসহ সুখে শান্তিতে বিস্ময়কর এ পৃথিবীর নানা রুপরস উপভোগ করবে। শুধু মানুষের জীবনকেই এ ছাচে  ফেলে দেখার দরকার নেই। পুরো মানব জাতির ইতিহাস আসলে এরকম যদি ও কিন্তু দ্বারা নির্ধারিত। এ যদি-কিন্তুকে আমরা ক্রিটিক্যাল জাংকচার বা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।  ব্রিটেনের যুদ্ধবাজ ও অত্যাচারী রাজা জনের মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স কালেকশনে বিরক্ত হয়ে তার ব্যারনরা প্রজাদের নিয়ে বিদ্রোহ করে আধুনিক গণতান্ত্রিক ইতিহাস শুরু করে ৯০০ বছর পূর্বে  ম্যাগনা কার্টা সাক্ষরের মধ্যে।  আজ হতে ৮০০ বছর পূর্বে ব্ল্যাক ডেথ এর মাধ্যমে ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা না গেলে ঐ সময়ের সামন্ত প্রথা বিলুপ্ত হতে কয়েক শতাব্দী লেগে যেত। ব্ল্যাক ডেথে এত মানুষ মারা যায় যে সামন্তদের দ্বারা শোষন করার মত লোক কমে যায়, ফলে তারা সরাসরি শ্রমিক শোষণ না করে শ্রমিকদের জমির মালিকানা দেয়। মানুষের হাতে ক্ষমতা যায়, মান...

বাংলায় ইসলাম প্রচারে সফল্যের ঐতিহাসিক কারণ

  মানুষের গভীরের অনুরণন শুনতে প্রয়োজন তার ইতিহাসের ইতিবৃত্ত জানা,  নৃতত্বের নতুনত্ব খুঁজে বের করা আর সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় কিভাবে তার আর্থ- সামাজিক-নৈতিক-ধার্মিক কলকব্জা গড়ে উঠেছে সেগুলোর বর্ণনা দূরবীন দিয়ে নয়- অনুবীক্ষণ  যন্ত্র দিয়ে আবিষ্কারের চেষ্ঠায় ব্রত হওয়া। প্রাগৈতিহাসিক এ বদ্বীপের  নদী-নালা  পূর্ণ স্যাতেস্যাতে উর্বর  মাটিতে সনাতন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ছাপিয়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ১৮৭২ সালে প্রথম আদমশুমারিতে।  সারা ভারতীয় উপমহাদেশে ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু কাছাকাছি হওয়া সত্বেও বাংলা অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্যের কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকগণ নানামত দিয়েছেন এবং প্রত্যেকটি মত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে খারিজ করে দেয়া যায়। তবে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছেন এদের সিংহভাগই নিম্নবর্গের হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা ধর্মান্তরিত হয়েছেন। এর কারিগর হলো এদেশে ১৩শ থেকে ১৭শ শতাব্দীতে আসা পীর- দরবেশ-সুফীরা। সংখ্যাগরিষ্ঠত নিয়ে বেশ  কয়েকটি মত পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলায় মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাওয়া, ব্রাক্ষণদের অত্...

চিন্তার ইতিহাসঃ মানুষ কিভাবে চিন্তা করতে শিখেছে?

  পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনবদ্য বিষ্ময়। একেবারে স্বাধীন ও আলাদাভাবে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে প্রায় সমসাময়িক সময়ে মানুষের লিখিত দর্শনগুলো লিপিবদ্ধ হয়। একেকটির উৎপত্তির সাথে আরেকটির কোন স্বম্পর্কই ছিল না। আজ হতে প্রায় ২৭শত বছর পূর্বে ভারতীয় দর্শনের ভিত্তিমূল উপনিষদগুলো রচিত হয় অজানা লেখকদের হাতে। প্রায় সাড়ে পচিশশত বছর পূর্বে চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস তার দর্শন প্রচার করে গেছেন। সক্রেটিসদেরও আগে থেলিসের হাত ধরে গ্রিক তথা পাশ্চাত্য দর্শন শুরু হয় প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে। কাছাকাছি প্রায় ২৪০০/২৫০০ বছর আগে সিদ্ধার্ত গৌতমা নেপালের লুম্বিনি ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন নির্বাণ লাভের দীক্ষা দিতে। এই দর্শনগুলোই পরবর্তীতে ছডিয়ে ছিটিয়ে পড়েছে সারাদুনিয়ায়। মানুষ চিন্তা করতে শিখেছে তাদের দীক্ষায়। মনে কি প্রশ্ন জাগে? ভারতীয়দের নীতিনৈতিকতা, জীবনাচরণ, আর্থিক অবস্থা কেন পাশ্চাত্যদের মত নয়? চীন, কোরিয়া,তাইওয়ান,  জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার  মানুষগুলোর সামাজিক ও আর্থিক চরিত্রগুলো এমন কেন? ভারতীয় ও চাইনিজদের অধিকতর আর্থিক ও সামাজিক শক্তি থাকার পরেও পশ্চিমারা কেন এনলাইটনমেন্টের উপর ভর করে শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে গিয়ে সারা...

বাঙালি মুসলমানের মন- এর অন্তর-বাহির

 ' বাঙালি মুসলমানের মন' সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সমালোচিত একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। এতে নানা সময়ে  ছফার লিখা বারোটি প্রবন্ধ থাকলেও নাম প্রবন্ধটি বাঙলা সাহিত্যের একটি অন্যতম বিতর্কিত রচনা। এ প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমানের নিম্ন নৈতিকতা, নিম্নরুচি,  লোভ, সংকীর্ণতা, নেতৃত্বগূনের অভাব ইত্যাদি ইতিহাসের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন উচ্চবর্ন হিন্দুদের অত্যাচারে নিম্নবর্নের হিন্দু ও গোড়া হিন্দুদের চাপে নির্যাতিত বৌদ্ধরা ইসলামগ্রহণ করেন। আব্বাসীয় খিলাফতের দ্বারা বাগদাদ, উমাইয়াদের দ্বারা স্পেনে ও ফাতেমিয়দের দ্বারা উত্তর আফ্রিকায় ইসলামী সভ্যতার আলো ও যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা এসেছিল তা বাংলা এলাকায় আসতে পারে নি। বরংচ, ৬০০-৭০০ সালের প্রকৃত ইসলামের পরিবর্তে একটু পরিবর্তিত ইসলাম এখানে এসেছে পীর ফকিরদের দ্বারা। দীর্ঘ সময় ভারতবর্ষে ইসলামী শাসন থাকলেও বাংলার মুসলমানরা রাজকার্য অংশগ্রহণে  ছিল ব্রাত্য। নিম্নবর্ণজাত  হওয়ার কারণে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে ছিল, রাজকার্যে তাদের চেয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দুরাই প্রাধান্য পেত। যেসব মুসলমানদের কোন কারণে সরকারী কাজে অংশগ্রহণ করে উপরে উঠার সুযোগ ছিল তারা ...

গ্রিক আগোরা ও বাংলাদেশের আজিজ মার্কেট

  দেশে  আজিজ সুপার মার্কেটের ঘটনাটা তাতপর্যপূর্ণ।  চোখের সামনেই হয়ে গেল দেখলাম। ইউনিভার্সিটি লাইফের শুরুতে অনেক বই এর দোকান দেখেছি। সবাই আসত। উঠতি ও প্রতিষ্ঠিত কবি, লেখক , ফিল্মমেকার, বুদ্ধিজীবী, চিন্তকরা আসত। গল্প করত, চা খেত। তারপর নিন্দুকের কাছে শাহবাগী বুদ্ধিজীবী সুশীল খেতাব পেত। কিন্তু কাজের কাজটা আসলে হত। দেশে বর্তমান এ পরিচিত সনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এ সিস্টেমের প্রডাক্ট। বই এর দোকানগুলো কেন্দ্র করে এসব  গড়ে উঠেছিল। তারপর নিত্য উপহারসহ চারুকলা কেন্দ্রিক লোকজন দেশি কালচার নাম ও ভাবভঙ্গি ব্যবহার করে কাপড়ের দোকান শুরু করে। এখন ব্যবসার পসারে , মুনাফার ঠেলায় মোটামুটি সব বইয়ের দোকান উধাও। কেউ কেউ কাটাবনের দিকে আন্ডারগ্রাউন্ড , চিপা-চাপায় কিছু দোকান দিয়েছে। তবে সেই আলাপ আড্ডা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। আমি এই ঘটনার নাম দিয়েছি 'আগোরা সিনড্রোম'। এ ক্ষেত্রে পাঠক সমাবেশ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। প্রাচীন গ্রিস সবে বিনিময় প্রথা পার হয়ে মুদ্রা প্রথার দিকে এগুচ্ছে। সে সময়ে প্রত্যেক গ্রীক সিটিতে একটি করে সুনির্দিষ্ট স্থান ছিল যেখানে জ্ঞানীগুণীরা আলোচনা করত, লোকজন এসে ...