ইয়োভাল নো. হারারি কি বলতে চান?

 আসলে তিনটা বই এর রিভিউ একসাথে দেয়া যায় না, তাই রিভিউ হিসেবে না দেখে পরিচয় হিসেবে দেখতে পারেন। ইয়োভাল নোয়াহ হারারিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই, তার একটি বই পড়লে বাকি দুইটিও নিজ থেকেই পড়ে নেবেন-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বলছি সেপিয়েন্স, হোমো ডিউস ও ২১ লেসন্স ফর দ্যা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি --এই তিন বই এর কথা।

সেপিয়েন্সঃ এটি বহুল পঠিত , প্রচলিত। স্বল্প পরিসরেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। তুলে এনেছেন কিভাবে ধাপে ধাপে মহাবিশ্বে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফ্রিকার জংগল হতে কিভাবে মানুষ কিভাবে সারাদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০হাজার বছর আগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ , ১০ হাজার বছর আগের কৃষি বিপ্লব ও কয়েকশ বছর আগের শিল্পবিপ্লবের হাত ধরেই মানুষ এগিয়েছে। সেপিয়েন্স তার নিজের অগ্রগতির জন্য ধ্বংস করেছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ । তবে তার গল্প তৈরির ক্ষমতার কারণে সংগঠিত হয়ে ছাড়িয়ে গেছে সকল প্রাণিকুলকে, পৃথিবীর শাসক এখন মানুষ।




হোমো ডিউসঃ হারারি এ বইতে ভবিষ্যতের মানুষ নিয়ে কিছু আভাস দিয়েছেন । দ্রুত অগ্রসরমান আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স , বায়োটেকনলজি, ডাটা সায়েন্স এর কারণে ভবিষ্যতের মানুষ হবে আলাদা, তাদের তিনি নাম দিয়েছেন হোমো ডিউস। ৫০ হাজার বছর আগের হোমো নিয়েন্ডারথাল থেকে হোমো সেপিয়েন্স সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে পৃথিবীকে রাজত্ব করছে , হোমো ডিউস সেই একই পথে এগুতে পারে। বেশিরভাগ স্বাভাবিক কাজগুলো আর থাকবেনা, তৈরি হবে লক্ষ লক্ষ অকর্মন্য মানুষ। বিশাল ডাটা ভান্ডার আর প্রযুক্তি উৎকর্ষতার কারণে মহাবিশ্বের নেক্সট কেন্দ্রবিন্দু হবে সিলিকন ভ্যালির মত জায়গাগুলো।

২১ লেসন্স ফর দ্যা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি: ২০৫০ বা ২০৮০ সালের পৃথিবীতে বেচে থাকলে আমাদের কি কি জানা প্রয়োজন সে বিষয় নিয়েই এ বই। পৃথিবী এত দ্রুত পরিবর্তনশীল যে আগামী ১০ বছরের পরের পৃথিবীর দৃশ্যপট কেমন হবে তা বলা মুশকিল। তবে ভবিষ্যতের পৃথিবী নিয়ে হারারি বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন। উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কি খুব খারাপ? জাতীয়তাবাদের ধোয়া তোলার দিন কি শেষ? সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের করনীয় কি হওয়া উচিত? ভবিষ্যতের পৃথিবীতে বেচে থাকতে বাচ্চাদের কি শেখানো উচিত? ইমিগ্রেশনের পথপরিক্রমা কোন দিকে যাবে? সাম্নের দিনে সারা পৃথিবীর রাজত্ব করবে কে?

ইয়োভাল নোয়াহ হারারির এ বইগুলো ইতিহাস, বিজ্ঞান, এন্থ্রোপলজি, ইকনোমিক্স ও দর্শনের চমৎকার সমন্বয়। লিখাগুলো সহজ ও মজার, সুখপাঠ্য। তবে লেখক বইগুলোতে অনুমান করেছেন , সবকিছু বেদবাক্য মনে করার কিছু নেই। তিনি ডারউইনের বিবর্তনবাদ ও ফ্রেড্রিখ নীটশের ইশ্বরসংক্রান্ত মতবাদে জোর দিয়েছেন। কিছু অনুমান মনে হবে যথেষ্ট পরিমান শক্তিশালী না। তারপরেও যারা পৃথিবীকে ও মানূষকে জানতে চান , পলিসি মেকিং এ কাজ করেন বা করবেন তাদের জন্য এ বইগুলো হাইলি রেকমেন্ডেড। তিনটি বই সময় নিয়ে টানা পড়বেন, ভাল লাগবে।

মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক পঠিত

আধুনিক আমলাতন্ত্র: ওয়েবার থেকে ইভানস

চেপে রাখা অর্থণীতি: মুক্তবাজারের মিথ্যাবাজার

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?

ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রচিন্তা: আলথুসেরের রাষ্ট্রপাঠ