গ্রিক আগোরা ও বাংলাদেশের আজিজ মার্কেট

 দেশে  আজিজ সুপার মার্কেটের ঘটনাটা তাতপর্যপূর্ণ।  চোখের সামনেই হয়ে গেল দেখলাম। ইউনিভার্সিটি লাইফের শুরুতে অনেক বই এর দোকান দেখেছি। সবাই আসত। উঠতি ও প্রতিষ্ঠিত কবি, লেখক , ফিল্মমেকার, বুদ্ধিজীবী, চিন্তকরা আসত। গল্প করত, চা খেত। তারপর নিন্দুকের কাছে শাহবাগী বুদ্ধিজীবী সুশীল খেতাব পেত। কিন্তু কাজের কাজটা আসলে হত। দেশে বর্তমান এ পরিচিত সনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এ সিস্টেমের প্রডাক্ট।

বই এর দোকানগুলো কেন্দ্র করে এসব  গড়ে উঠেছিল। তারপর নিত্য উপহারসহ চারুকলা কেন্দ্রিক লোকজন দেশি কালচার নাম ও ভাবভঙ্গি ব্যবহার করে কাপড়ের দোকান শুরু করে। এখন ব্যবসার পসারে , মুনাফার ঠেলায় মোটামুটি সব বইয়ের দোকান উধাও। কেউ কেউ কাটাবনের দিকে আন্ডারগ্রাউন্ড , চিপা-চাপায় কিছু দোকান দিয়েছে। তবে সেই আলাপ আড্ডা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। আমি এই ঘটনার নাম দিয়েছি 'আগোরা সিনড্রোম'। এ ক্ষেত্রে পাঠক সমাবেশ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।

প্রাচীন গ্রিস সবে বিনিময় প্রথা পার হয়ে মুদ্রা প্রথার দিকে এগুচ্ছে। সে সময়ে প্রত্যেক গ্রীক সিটিতে একটি করে সুনির্দিষ্ট স্থান ছিল যেখানে জ্ঞানীগুণীরা আলোচনা করত, লোকজন এসে শুনত। জ্ঞানচর্চার তীর্থস্থান টাইপ একটা ব্যাপার ছিল। এই জায়গাকে তারা বলত 'আগোরা'।

যেহেতু আগোরায় লোকজন বেশ ভাল আসে, তারপর মুদ্রার ব্যবহার শুরু হয়েছে, ট্রানজেকশন সহজ হয়েছে, স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্য সেখানে দু-চারটে করে আনা শুরু করল। আস্তে আস্তে কেনা-বেচা বাড়তে থাকল। কিছুদিন জ্ঞানচর্চা শপিং  পাশাপাশি চলতে লাগল। তবে আস্তে আস্তে শপিং করা জ্ঞানচর্চার উপর জয় লাভ করল।

বর্তমানে গ্রিক ডিকশনারিতে আগোরা মানে হচ্ছে মার্কেট। ভার্ভ  মিনিং হচ্ছে- টু বাই। বাংলাদেশে আবার আগোরা নামে গ্রোসারি শপিং সেন্টার আছে।

আগোরা বাংলাদেশের একটা গ্রোসারি  শাখা আজিজ মার্কেটে খুলে দিলে ইতিহাসের সতেরোকলা পূর্ন হয়ে যাবে। আ্শায় রইলাম।


মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক পঠিত

আধুনিক আমলাতন্ত্র: ওয়েবার থেকে ইভানস

চেপে রাখা অর্থণীতি: মুক্তবাজারের মিথ্যাবাজার

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?

ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রচিন্তা: আলথুসেরের রাষ্ট্রপাঠ