পোস্টগুলি

Philosophy লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

ছবি
দেরিদা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে খুব প্রাসঙ্গিক। দেশে সাহিত্যিক, চিন্তক বা টেক্সট মেইকারদের সাম্প্রতিক অনলাইন গোলাগুলি ও মারামারি দার্শনিক জাক দেরিদার ‘Deconstruction বা বিনির্মাণ’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। ভাষা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ একটি মাধ্যম। ভাষার মাধ্যমে আমরা সর্বশেষ চূড়ান্ত কোন ধারণা পেতে পারি না। কারণ ভাষা অস্থির, সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আজ যা বোঝাচ্ছে, কাল তা নাও বোঝাতে পারে। আপনি যা বুঝছেন আমি তার উল্টোটা বুঝতে পারি। আমি এখন যা বুঝছি পরে আমার কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ ভাষার বাজারে চিরস্থায়ী ‘বেদবাক্য’ বলে কিছু নেই । আপনি যে কোন টেক্সট বা লেখাকে সমালোচনা করতে পারবেন , নিজের মত করে ব্যাখ্যা বা সমালোচনা করতে পারবেন। সমালোচনার অধিকার সকলের। আপনি যে কোন লেখা বা টেক্সটকে গুরু-লঘু, হালকা- ভারী, সাদা-কালো , ভালো-মন্দ বলতে পারেন। কিন্তু বিনির্মাণে এইসব বাইনারি বিশেষণকে অস্বীকার করা হয়েছে। ভালো মানে আপনার কাছে ভালো, আমার কাছে মন্দ হতে পারে- এবং এটা বলার অধিকার আমার আছে । আসলে এই ধরনের সকল বাইন...

ইয়োভাল নো. হারারি কি বলতে চান?

ছবি
  আসলে তিনটা বই এর রিভিউ একসাথে দেয়া যায় না, তাই রিভিউ হিসেবে না দেখে পরিচয় হিসেবে দেখতে পারেন। ইয়োভাল নোয়াহ হারারিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই, তার একটি বই পড়লে বাকি দুইটিও নিজ থেকেই পড়ে নেবেন-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বলছি সেপিয়েন্স, হোমো ডিউস ও ২১ লেসন্স ফর দ্যা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি --এই তিন বই এর কথা। সেপিয়েন্সঃ এটি বহুল পঠিত , প্রচলিত। স্বল্প পরিসরেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। তুলে এনেছেন কিভাবে ধাপে ধাপে মহাবিশ্বে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফ্রিকার জংগল হতে কিভাবে মানুষ কিভাবে সারাদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০হাজার বছর আগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ , ১০ হাজার বছর আগের কৃষি বিপ্লব ও কয়েকশ বছর আগের শিল্পবিপ্লবের হাত ধরেই মানুষ এগিয়েছে। সেপিয়েন্স তার নিজের অগ্রগতির জন্য ধ্বংস করেছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ । তবে তার গল্প তৈরির ক্ষমতার কারণে সংগঠিত হয়ে ছাড়িয়ে গেছে সকল প্রাণিকুলকে, পৃথিবীর শাসক এখন মানুষ। হোমো ডিউসঃ হারারি এ বইতে ভবিষ্যতের মানুষ নিয়ে কিছু আভাস দিয়েছেন । দ্রুত অগ্রসরমান আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স , বায়োটেকনল...

সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?

ছবি
  ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর শুধু খুজেই গেছি, বিভিন্ন সোর্সে ঢু মেরেছি, বেশিরভাগ সময় কনফিউজড হয়েছি। কোথা থেকে আসল শিয়া -সুন্নি, হানাফি, হাম্বলি, শাফেয়ী, আহলে হাদিস, সুফিবাদ, তাব্লীগ, পীরবন্দনা ইত্যাদি নানা জানা অজানা ভাগ -উপভাগ? ফাজায়েলে আমল, ফাজায়েলে জিকির, মুক্সুদুল মুমিনীন, সিহাহ সিত্তাহ সহ নানা প্রখ্যাত- অখ্যাত হাদিস, ফিকাহ, তাফসির বই এ লেখা একেক দর্শন, ব্যাখ্যা, সমাধান, নির্দেশনা মাঝে মাঝেই কনফিউজিং মনে হয়েছে৷ একেকটার সাথে আরেকটা মেলে না, কিছু সরাসরি জানাশোনা কোরানের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হত। আমাদের প্রচলিত আচার, অনুষ্ঠান, উতসব, পোশাকি, কালচার, জমায়েত, হুজুর, মুরুব্বী, গ্রুপিং ভিত্তিক ধর্মচর্চা কতটা সঠিক? আল্লাহ তায়ালা যেখানে কোরানকে কম্পলিট ও ডিটেইল জীবনাদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছেন কিন্তু কোরানের ব্যাখ্যা বা অস্পষ্টতার দোহাই দিয়ে সহস্র অপ্রয়োজনীয় হাদিস, তাফসির, ফিকাহ, ইজমা কিয়াস দিয়ে ধর্মকে কতটা কলুষিত করেছি? এসবের কোরানিক ভিত্তিটাইবা কি? আর এ পলু্শনগুলো কখন কিভাবে হয়েছে? আল্লাহ তায়ালা নিজেই যেখানে বিশ্বাস ও সতকর্মকে জান্নাতের পূর্বশর্ত দিয়েছেন, বলেছেন যারা...

মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে তিনটি ব্যাখ্যা

  মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে  তিনটি ব্যাখ্যা আমার ভাল লাগে। ১. বুদ্ধের দর্শনঃ যখন মানুষ কষ্টে আছে বলে মনে করে এবং তা দূর করার জন্য নানারকম শারিরীক ও মানসিক যাতনার মধ্যে দিয়ে যায়, আরো  কষ্ট করে--যাতে তার দুঃখ দূরীভুত হয়, কিন্তু আসলে এটা  তাকে আরো অসুখী করে। আবার যখন কোন মানুষ নিজেকে সুখী মনে করে এবং তা চিরস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নানারকম মানসিক ও শারীরিক কষ্ট করে, এটা তাকে আরো দুঃখের মধ্যে ফেলে দেয়। অর্থাৎ আপনার সুখ অর্জন বা দুঃখ দূর করার অতি উপায় না খূঁজে বেড়ানোই আপনাকে সুখী রাখতে পারে। অবস্থার পরিবর্তনের আকাঙখা কিংবা বর্তমানকে সজোড়ে আকড়ে ধরে রাখার প্রচেষ্ঠাই আপনার সুখ কেড়ে নেবে। ঠিক কাছাকাছি ধরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় দুঃখবাদের দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ারের কাছে।  তার মতে, রিপিটিভ প্লেজারকেই সুখ বলে। দুনিয়াতে দুঃখের চেয়ে সুখ কম, সুখ ক্ষণস্থায়ী।  আপনার সুখী হওয়ার আকাংখা অন্যের দুঃখের দামে কেনা। অর্বাচীন লোকদের বদভ্যাস হচ্ছে সুখ শিকার করে বেড়ানো। নিজের মধ্যে সুখ খুজে পাওয়া কঠিন, অন্য কোথাও পাওয়া অসম্ভব। ২. সায়েন্সঃ সুখ-দুঃখের  জন্য দায়ী হরমোনের হ্রাস-বৃ...

ঐতিহাসিক ও দার্শনিক উইল ডুরান্ট এর মূল বক্তব্য

  ইতিহাসে যখনই নির্দিষ্ট অঞ্চলে  অর্থনৈতিক প্রাচুর্য , রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা,  নীতিবোধের উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প সাধনা শক্তিশালী হয়েছে, সেখানেই সভ্যতার বীজ অঙ্কুরোদগমিত হয়ে শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে ও ডালপালা চারদিকে ছড়িয়েছে। আমরা এখন যা করি তা আমাদের মধ্যে এসেছে হাজারো বছরের চর্চা ও পরিবর্তনের  মধ্য দিয়ে। দশ হাজার বছর আগে শিকারী ছিলাম, এখনো দুর্বলদের মেরে আনন্দ পাই। সামনে খাবার পেলে সবকিছু গোগ্রাসে খাই, কারণ এমনটাই করেছে আমাদের পূর্বপূরুষেরা। তারা শিকার বা সামনে কোন খাবার পেলে প্রথমে নিজেদের উদরপূর্তি করত গলা পর্যন্ত। অনেকে খাবার সংগ্রহ করে রাখা বা ভবিষ্যতের জন্য কাজ করাকে অপমানজনক মনে করত। নানা পর্যায়ে তারা নানা ধরণের খাবার খেয়েছে-তার মধ্যে সবচেয়ে মজাদার হচ্ছে স্বজাতির মাংস। আদিম সমাজ সাম্যবাদী,  জঙ্গলে কেউ খেতে বসলে খাওয়ার আগে চিৎকার করত, যাতে আশে পাশে কেউ ক্ষুধার্ত থাকলে সে খেতে পারে। তারা একে অপরের প্রতি অত্যন্ত বিবেচকের মত আচরণ করত যা সভ্য সমাজে দেখা যায় না। তবে সম্পত্তি সকলের হওয়ায় কেউ কেউ অলস আচরণ করে সুবিধা নেয়ার চেষ্ঠা করত। আদিম সমাজ যতদিন এ সা...

বাংলায় ইসলাম প্রচারে সফল্যের ঐতিহাসিক কারণ

  মানুষের গভীরের অনুরণন শুনতে প্রয়োজন তার ইতিহাসের ইতিবৃত্ত জানা,  নৃতত্বের নতুনত্ব খুঁজে বের করা আর সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় কিভাবে তার আর্থ- সামাজিক-নৈতিক-ধার্মিক কলকব্জা গড়ে উঠেছে সেগুলোর বর্ণনা দূরবীন দিয়ে নয়- অনুবীক্ষণ  যন্ত্র দিয়ে আবিষ্কারের চেষ্ঠায় ব্রত হওয়া। প্রাগৈতিহাসিক এ বদ্বীপের  নদী-নালা  পূর্ণ স্যাতেস্যাতে উর্বর  মাটিতে সনাতন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ছাপিয়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ১৮৭২ সালে প্রথম আদমশুমারিতে।  সারা ভারতীয় উপমহাদেশে ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু কাছাকাছি হওয়া সত্বেও বাংলা অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্যের কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকগণ নানামত দিয়েছেন এবং প্রত্যেকটি মত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে খারিজ করে দেয়া যায়। তবে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছেন এদের সিংহভাগই নিম্নবর্গের হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা ধর্মান্তরিত হয়েছেন। এর কারিগর হলো এদেশে ১৩শ থেকে ১৭শ শতাব্দীতে আসা পীর- দরবেশ-সুফীরা। সংখ্যাগরিষ্ঠত নিয়ে বেশ  কয়েকটি মত পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলায় মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাওয়া, ব্রাক্ষণদের অত্...

চিন্তার ইতিহাসঃ মানুষ কিভাবে চিন্তা করতে শিখেছে?

  পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনবদ্য বিষ্ময়। একেবারে স্বাধীন ও আলাদাভাবে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে প্রায় সমসাময়িক সময়ে মানুষের লিখিত দর্শনগুলো লিপিবদ্ধ হয়। একেকটির উৎপত্তির সাথে আরেকটির কোন স্বম্পর্কই ছিল না। আজ হতে প্রায় ২৭শত বছর পূর্বে ভারতীয় দর্শনের ভিত্তিমূল উপনিষদগুলো রচিত হয় অজানা লেখকদের হাতে। প্রায় সাড়ে পচিশশত বছর পূর্বে চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস তার দর্শন প্রচার করে গেছেন। সক্রেটিসদেরও আগে থেলিসের হাত ধরে গ্রিক তথা পাশ্চাত্য দর্শন শুরু হয় প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে। কাছাকাছি প্রায় ২৪০০/২৫০০ বছর আগে সিদ্ধার্ত গৌতমা নেপালের লুম্বিনি ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন নির্বাণ লাভের দীক্ষা দিতে। এই দর্শনগুলোই পরবর্তীতে ছডিয়ে ছিটিয়ে পড়েছে সারাদুনিয়ায়। মানুষ চিন্তা করতে শিখেছে তাদের দীক্ষায়। মনে কি প্রশ্ন জাগে? ভারতীয়দের নীতিনৈতিকতা, জীবনাচরণ, আর্থিক অবস্থা কেন পাশ্চাত্যদের মত নয়? চীন, কোরিয়া,তাইওয়ান,  জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার  মানুষগুলোর সামাজিক ও আর্থিক চরিত্রগুলো এমন কেন? ভারতীয় ও চাইনিজদের অধিকতর আর্থিক ও সামাজিক শক্তি থাকার পরেও পশ্চিমারা কেন এনলাইটনমেন্টের উপর ভর করে শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে গিয়ে সারা...

বাঙালি মুসলমানের মন- এর অন্তর-বাহির

 ' বাঙালি মুসলমানের মন' সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সমালোচিত একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। এতে নানা সময়ে  ছফার লিখা বারোটি প্রবন্ধ থাকলেও নাম প্রবন্ধটি বাঙলা সাহিত্যের একটি অন্যতম বিতর্কিত রচনা। এ প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমানের নিম্ন নৈতিকতা, নিম্নরুচি,  লোভ, সংকীর্ণতা, নেতৃত্বগূনের অভাব ইত্যাদি ইতিহাসের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন উচ্চবর্ন হিন্দুদের অত্যাচারে নিম্নবর্নের হিন্দু ও গোড়া হিন্দুদের চাপে নির্যাতিত বৌদ্ধরা ইসলামগ্রহণ করেন। আব্বাসীয় খিলাফতের দ্বারা বাগদাদ, উমাইয়াদের দ্বারা স্পেনে ও ফাতেমিয়দের দ্বারা উত্তর আফ্রিকায় ইসলামী সভ্যতার আলো ও যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা এসেছিল তা বাংলা এলাকায় আসতে পারে নি। বরংচ, ৬০০-৭০০ সালের প্রকৃত ইসলামের পরিবর্তে একটু পরিবর্তিত ইসলাম এখানে এসেছে পীর ফকিরদের দ্বারা। দীর্ঘ সময় ভারতবর্ষে ইসলামী শাসন থাকলেও বাংলার মুসলমানরা রাজকার্য অংশগ্রহণে  ছিল ব্রাত্য। নিম্নবর্ণজাত  হওয়ার কারণে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে ছিল, রাজকার্যে তাদের চেয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দুরাই প্রাধান্য পেত। যেসব মুসলমানদের কোন কারণে সরকারী কাজে অংশগ্রহণ করে উপরে উঠার সুযোগ ছিল তারা ...

সহজিয়া পথঃ তাও তে চিং

আজ হতে ২৬০০/২৭০০ বছর পূর্বে মহান দার্শনিক লাও ৎস শিখিয়েছেন কিভাবে প্রতিযোগীতাহীন শৈল্পিক নির্জনতার ও নিরাসক্ত আনন্দের  মধ্যে সুখী জীবনযাপন করতে হয়। কনফুসিয়াসের সমসাময়িক এ চৈনিক দার্শনিক সহজ-সরল ও পাশবিক উত্তেজনাহীন ভরপুর সুখী জীবনের কথা বলে গেছেন। তিনি নাগরিক  জীবন হতে ছুটি নিতে বা জীবন সংগ্রাম হতে  পলায়ন করতে বলেন নি, দিয়েছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠাহীন নিরাসক্ত আনন্দঘন জীবনের সন্ধান। তিনি বলেছেন মহান তাও অর্জনের  কথা। তাও সংজ্ঞায়নের বাইরে  এক স্বাধীন সার্বভৌম,  যাকে অনুভবে পাওয়া যায়, সাধনা করে অর্জন করে নিতে হয়। লাও ৎস তার ছোট ছোট পংক্তিমালার মাধ্যমে তাও খুঁজে পাওয়ার পথের সন্ধান দিয়েছেন। “যদি বা মুক্ত হও বাসনা থেকে   তবে রহস্যকে পাবে যদি পড়ে থাক বাসনাকে নিয়ে কেবলই পাবে প্রকাশ্যকে”/ তাও এর  সন্ধান দেখেছেন লাও ৎস নিরাসক্ততার মাঝে— / “যখন কিছু জাগে জাগতে দেন যখন কিছু লুপ্ত হয় বিলুপ্ত হতে দেন— তিনি প্রত্যাশা ছাড়াই কাজ করে যান’’। / “কিছু না, অনুশীলন করো, কোন চেষ্ঠা ছাড়াই সবকিছু পাবে”/ তাও অর্জনে লাও ৎস বলেছেন সঠিক কর্মপন্থার কথা । কি করতে হবে আর কি করা উন...

গ্রিক আগোরা ও বাংলাদেশের আজিজ মার্কেট

  দেশে  আজিজ সুপার মার্কেটের ঘটনাটা তাতপর্যপূর্ণ।  চোখের সামনেই হয়ে গেল দেখলাম। ইউনিভার্সিটি লাইফের শুরুতে অনেক বই এর দোকান দেখেছি। সবাই আসত। উঠতি ও প্রতিষ্ঠিত কবি, লেখক , ফিল্মমেকার, বুদ্ধিজীবী, চিন্তকরা আসত। গল্প করত, চা খেত। তারপর নিন্দুকের কাছে শাহবাগী বুদ্ধিজীবী সুশীল খেতাব পেত। কিন্তু কাজের কাজটা আসলে হত। দেশে বর্তমান এ পরিচিত সনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এ সিস্টেমের প্রডাক্ট। বই এর দোকানগুলো কেন্দ্র করে এসব  গড়ে উঠেছিল। তারপর নিত্য উপহারসহ চারুকলা কেন্দ্রিক লোকজন দেশি কালচার নাম ও ভাবভঙ্গি ব্যবহার করে কাপড়ের দোকান শুরু করে। এখন ব্যবসার পসারে , মুনাফার ঠেলায় মোটামুটি সব বইয়ের দোকান উধাও। কেউ কেউ কাটাবনের দিকে আন্ডারগ্রাউন্ড , চিপা-চাপায় কিছু দোকান দিয়েছে। তবে সেই আলাপ আড্ডা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। আমি এই ঘটনার নাম দিয়েছি 'আগোরা সিনড্রোম'। এ ক্ষেত্রে পাঠক সমাবেশ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। প্রাচীন গ্রিস সবে বিনিময় প্রথা পার হয়ে মুদ্রা প্রথার দিকে এগুচ্ছে। সে সময়ে প্রত্যেক গ্রীক সিটিতে একটি করে সুনির্দিষ্ট স্থান ছিল যেখানে জ্ঞানীগুণীরা আলোচনা করত, লোকজন এসে ...

ম্যাকিয়াভেলিঃ মহাপাতকীর না-কি মহানায়কের মহাগুরু?

  তার বাণীগুলো তখনো নতুন ছিল, এখনো চিরনতুন-এবং অদ্ভুত। সমসাময়িককালে দেখেছেন দুর্বল, মেরুদন্ডহীন ও ক্ষমতাহীন শাসকদের কবলে পড়ে খন্ড-বিখন্ড ইতালি, বিদেশী শক্তির হাতে পর্যদুস্ত। চার্চ ও পোপদের  দৌরাত্ব্য। তাদের নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপের  কবলে  সার্ভভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছিল না সামন্ত রাজ্যগুলো।  অন্যদিকে, তারাও পারছিল না ইতালিকে এক করে জনগণকে নিরাপত্তা ও উন্নততর জীবনের সুযোগ করে দিতে। এসব দেখেশুনে,  প্রচলিত ধর্মীয় ভালোমন্দ , সমাজ , নীতিনৈতিকতার বাইরে গিয়ে অভিজ্ঞ রাজকর্মচারী ও কূটণীতিবিদ ম্যাকিয়াভেলি তৈরি করার চেষ্ঠা করলেন একজন শক্তিশালী শাসকের মডেল। ইতিহাস ও সমসাময়িককালের  সফল ও ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়কদের চরিত্র  বিশ্লেষণ করে তৈরিকৃত   শাসকের  এ চরিত্র  ধর্ম , সমাজ, নীতিশাস্ত্র অনুমোদন না দিলেও একটি রাষ্ট্র শক্তহাতে পরিচালনার জন্য তৎকালীন সময়ের জন্য মহামন্ত্র, বর্তমানের জন্যেও যথেষ্ঠ প্রাসঙ্গিক। ম্যাকিয়ভেলি নানা ধরণের রাষ্ট্রকাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন। একটি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ও শাসন  করার উপায় বলেছেন, শাসকের চরিত্র কেমন হওয়া উচিৎ তা উল্লেখ...

নেতৃত্বের কালো অধ্যায়: Never Outshine Your Master

  ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই তরুন। সবে সিংহাসনে বসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ ফাকা হয়েছে। ফাইন্যান্স মিনিস্টার নিকোলাস ফুকো সাহেব খুব যোগ্য লোক, স্মার্ট, জ্ঞানী, যোগাযোগে সাংঘাতিক দক্ষ। তার টার্গেট সেই পদ। কিন্তু রাজা ইচ্ছে  করেই সে পদ ফাকা রাখলেন। ফাইন্যান্স মিনিস্টার সাহেব  আহত হলেন। কিন্তু মুষড়ে পড়েন নাই। তার মনে হলো রাজাকে যেভাবেই হোক ইম্প্রেসড করতেই হবে। পদ বাগাতে হবে। রাজার মন পেতে নিকোলাস সাহেব বিরাট পার্টি থ্রো করলেন। সে সময়ের ইউরোপের সেরা গায়ক-শিল্পীদের আনলেন। পরিবেশন করা হল ইউরোপের সকল দেশের  সেরা সেরা সুস্বাদু খাবার ও পানীয়। মলিয়েরকে দিয়ে নতুন নাটক লিখিয়ে সেরাশিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করালেন। এত জাকজমক আতশবাজি আলোকসজ্জা এর আগে কেউ কোন্দিন দেখেনি। সে সময়ের ইউরোপের রাজা-রাণী, প্রিন্স-প্রিন্সেস বুদ্ধিজীবীদের পার্টিতে দেখা গেল। সন্ধ্যা হতে ভোররাত পর্যন্ত চলল পার্টি। রাজা লুইস শুরু হতে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করলেন। শুরু থেকেই একেক বিষয় প্রদর্শিত হয় আর মিনিস্টার সাহেবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় সবাই। কি দক্ষতা, যোগ্যাতা, যোগাযোগ ক্ষমতা, ক্যারিশমেটিক এক সংগঠক আয়োজক মিনিস্টার সাহেব।...