পোস্টগুলি

মুখস্থবিদ্যার দৌরাত্ম্য হ্রাস পাবে কবে?

  বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব জ্ঞান দেওয়ার পাশাপাশি নতুন জ্ঞান তৈরি করা। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে থাকেন সরকারি কর্মচারীরা। জ্ঞান গ্রহণ, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন একঝাঁক মেধাবী, সৃজনশীল, উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন ছাত্রছাত্রী ও কর্মিবাহিনী। বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি সংস্থাগুলো নিজস্ব পদ্ধতি অনুযায়ী লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে থাকে। দেখা যায়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নের ধরন মোটামুটি এক রকম: বাংলায় ২৫ শতাংশ, ইংরেজিতে ২৫ শতাংশ ও সাধারণ জ্ঞানে ৫০ শতাংশ। দেশে অনেক সরকারি চাকরির বাছাই পরীক্ষায় এই স্ট্যান্ডার্ড মেনে প্রশ্ন করা হয়। সৃজনশীল ও মননশীল যেকোনো ব্যক্তির বিষয়টি নিয়ে চিন্তার ও আলোচনার খোরাক রয়েছে। জ্ঞানার্জনের মাধ্যম হিসেবে সঠিক ভাষাজ্ঞান অত্যন্ত জরুরি। সে হিসেবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি জানার বিকল্প নেই। কিন্তু খটকাটি সাধারণ জ্ঞান নিয়ে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের কল্যাণে সব তথ্য এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এই যুগে মুখস্থ ধাঁচের সাধারণ জ্ঞান যথা এর-ওর জন্মসাল, জন্মদিন, রাজধানী, মুদ্রা, বিমানবন...

সর্বভারতীয় সাম্প্রদায়িকতার আলোকে দেশভাগ

  দেশে ৪৭ এর দেশভাগের আগের ইতিহাস খুব বেশি চর্চিত হয় না; আমরা জাতি হিসেবে অদূরদর্শী সেটার প্রমান করার জন্য এর বেশি আর কিছু বলা লাগে না। অচর্চিত এ অধ্যায়ের যে অংশটুকু জানি, তা ভালো ভাবে ক্রস-সেকশন করলে দেখা যায়, আমাদের জানা অংশটুকুর বেশিরভাগ গালগল্প বা মিথ। এসব মিথ লিখেছেন ইতিহাসের অংশবিশেষ সময়ের দাপুটে চরিত্র বা তার অনুসারীরা। তাই আমাদের জানায় রয়ে গেছে বিরাট গ্যাপ। কৃষক ও নানা নিম্নবিত্তের সন্তানদের নিয়ে গড়ে উঠা  হিন্দু-মুসলমানদের সামগ্রিক অংশগ্রহণে ১৮৫৭ এর অসাম্প্রদায়িক  সিপাহী বিপ্লব শাসক ইংরেজদের শুধু বিপদেই ফেলেনি, দারূণ এক শিক্ষাও দিয়ে গেছে। ডিভাইড এন্ড রুলের প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে ১৮৭২ সালেই তারা সর্বভারতীয় শুমারি করে বের করে আনে কোন ধর্মের কে, কয়জন, কোথায় কি করেন। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঐসব গরীব কৃষকমজুর নিম্নবর্গের  মনুষ্যসন্তানেরা যাতে অসাম্প্রদায়িকভাবে একজোট হয়ে আরেকটি  বিপ্লব গড়ে না তুলতে পারেন, সে জন্য ইংরেজ এলান অক্টাভিয়ান হিউমের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় ভারতীয় কংগ্রেস।  ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের ধরে এনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জায়গায় বসিয়ে ঐ...

ভালো জীবাণু খারাপ জীবাণু

জীবাণু বা অণুজীব, নাম শুনেই মনে হয় খারাপ কিছু। কিন্তু অবাক হবে জেনে, খারাপ অণুজীব বা জীবাণুর চেয়ে ভালো জীবাণুর সংখ্যাই বেশি! যার মধ্যে একটি অণুজীব আছে, যাকে তুমি প্রতিদিন সকালের নাশতায় খাচ্ছ! লিখেছেন তৌহিদ এলাহী সুস্বাদু নরম পাউরুটি হয় ইস্ট নামের একটি ছত্রাক দিয়ে। এ ছত্রাক এক ধরনের ভালো অণুজীব। তার মানে প্রতিদিন সকালেই কিন্তু তুমি জীবাণু খাচ্ছ। অণুজীবের তালিকায় আছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, শৈবাল, আরকিয়া, প্রোটোজোয়া। এদের মধ্যে বড়জোর ৫ শতাংশ দুষ্ট প্রকৃতির। অসুখবিসুখ ঘটায়। বাকিগুলো খুব দরকারি। বেশির ভাগই নিরীহ টাইপের। সাতে-পাঁচে নেই। তবে এদের খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। প্রয়োজন হয় শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের। এ ফাঁকে বলে রাখি, বিজ্ঞানী লিউয়েন হুক আবিষ্কার করেছিলেন এ যন্ত্র। প্রাণিজগতের মধ্যে সবার আগে কে এসেছে পৃথিবীতে? উত্তর—অণুজীব। ডাইনোসরদেরও কোটি বছর আগে এসেছে তারা। সারা দুনিয়ায় কী পরিমাণ অণুজীব আছে তা কল্পনার বাইরে। একজন মানুষের শরীরেই থাকে ৪০ লাখ কোটি ব্যাকটেরিয়া। বাগানের এক চামচ মাটিতেই আছে ১০০ কোটি ব্যাকটেরিয়া, দেড় লাখ ছত্রাক। আসলে জীবাণুরা সব সময়ই আমাদের সঙ্গে, পাশে, ভেতরে সব জায়গায় থ...

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

ছবি
আজ থেকে  দশহাজার বছর পূর্বে মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে   স্থায়ীভাবে  এক জায়গায় থাকা শুরু করে,  ধীরে ধীরে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠে। উন্নত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত তিনটি শিল্প বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছে।  বাষ্প ইঞ্জিন ও রেললাইনের হাত ধরে প্রথম শিল্প বিপ্লব হয়েছিল  ১৭৬০ থেকে ১৮৪০ পর্যন্ত।   বিদ্যুৎ  ও কনভেয়ার বেল্ট/এসেমব্লি লাইনের  সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে  দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব  চালু ছিল বিংশ শতাব্দীর ১৯৬০-১৯৭০  সাল পর্যন্ত।  মেইনফ্রেম কম্পিউটার,  সুপার কম্পিউটার,  পার্সোনাল কম্পিউটার ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে সংঘটিত হয় তৃতীয়  শিল্প বিপ্লব। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, রোবটিক্স্‌ , আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স , মেশিন লার্নিং , জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং,  থ্রিডি প্রিন্টিং ইত্যাদির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটে চলেছে।  সময়টি এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের  হলেও , পৃথিবীর প্রায় ১৭% মানুষ এখনো  দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের নাগাল পায়নি, এবং  ৪০০ কোটি মানুষ তৃতী...

কোরবানির অর্থনীতি

  অতিসামান্য অর্থনীতির জ্ঞান দিয়ে যা বুঝি বাজারে টাকা বা মুদ্রার ফলপ্রসু কন্ট্রিবিউশন  মাপার জন্য ব্যবহার করা হয় মাল্টিপ্লাইয়ার ইফেক্টকে।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাপানো টাকা হাতবদল হয়ে ঘুরতে থাকে-  যতবেশি হাতবদল হবে অর্থনীতি ততবেশি গতিশীল হবে। মানুষের হাতে টাকা যাবে, খরচ হবে,  আরেকজন পাবে -এভাবেই অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। কোন এক বড় ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ বা কালোটাকার মালিক যদি টাকা  বিদেশ পাচার করে দেয়, তাহলে মাল্টিপ্লায়ার  ইফেক্ট বন্ধ অথবা ধীর  হয়ে যায়। অপরদিকে ইদ, পহেলা বৈশাখ,  গ্রাম কেন্দ্রিক ক্ষুদ্র কৃষক, ব্যাবসায়ীর  ইনকাম, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর টাকাগুলো অনেক  বেশি হাতবদল হয়, অর্থনীতিকে প্রাণ দান করে। এই ধরুন সামান্য গরু পালনের সাথে জড়িত ঘাস-পশুখাদ্য-দুগ্ধজাতপন্য ব্যবসায়ী,  চামড়া ব্যবসায়ি,  মসজিদ- মাদ্রাসা- এতিমখানা,  ট্রান্সপোর্ট শ্রমিক, দালাল, কসাই,  রাখাল, দোকানদার ইত্যাদি। এর বাইরেও কত নাম জানা অজানা পেশার কত জন যে জড়িত তা আংগুল গুনে হিসেব করা সম্ভব না। এরা যা পায় তা দিয়ে চালু রাখে গ্রামের চাল, ডাল,...

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

  ন্যাড়া একবিকেলে  বেলতলায় গেল। যদি ন্যাড়ার মাথায় বেল পড়ে , সে পরপারে চলে যাবে। কিন্তু ঐ সুন্দর বিকেলে কোন এক ন্যাড়ির সাথে দেখা হয়ে গেলে ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে যাবে।  তারা এরপর সন্তান সন্ততিসহ সুখে শান্তিতে বিস্ময়কর এ পৃথিবীর নানা রুপরস উপভোগ করবে। শুধু মানুষের জীবনকেই এ ছাচে  ফেলে দেখার দরকার নেই। পুরো মানব জাতির ইতিহাস আসলে এরকম যদি ও কিন্তু দ্বারা নির্ধারিত। এ যদি-কিন্তুকে আমরা ক্রিটিক্যাল জাংকচার বা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।  ব্রিটেনের যুদ্ধবাজ ও অত্যাচারী রাজা জনের মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্স কালেকশনে বিরক্ত হয়ে তার ব্যারনরা প্রজাদের নিয়ে বিদ্রোহ করে আধুনিক গণতান্ত্রিক ইতিহাস শুরু করে ৯০০ বছর পূর্বে  ম্যাগনা কার্টা সাক্ষরের মধ্যে।  আজ হতে ৮০০ বছর পূর্বে ব্ল্যাক ডেথ এর মাধ্যমে ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা না গেলে ঐ সময়ের সামন্ত প্রথা বিলুপ্ত হতে কয়েক শতাব্দী লেগে যেত। ব্ল্যাক ডেথে এত মানুষ মারা যায় যে সামন্তদের দ্বারা শোষন করার মত লোক কমে যায়, ফলে তারা সরাসরি শ্রমিক শোষণ না করে শ্রমিকদের জমির মালিকানা দেয়। মানুষের হাতে ক্ষমতা যায়, মান...

থিংক এন্ড গ্রো রিচ এর মর্মকথা

  উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ধনী  এন্ড্রু কার্নেগি।  বিশাল বিত্ত আয়ের গোপন ফর্মুলা  ও সফলতার গল্প শোনার জন্য একদিন এক তরুণ সাংবাদিক মিঃ কার্নেগির ইন্টারভিউ নিলেন। তিনি সাংবাদিকের উৎসাহ, জ্ঞানে মুগ্ধ হলেন। মিঃ কার্নেগি  সাংবাদিককে একটি দ্বায়িত্ব দিলেন। ঐ সময়ের বিখ্যাত ও বিত্তশালী ৫০০ জনকে ইন্টারভিউ করতে হবে, প্রাপ্ত তথ্য ও জ্ঞান হতে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে সফলতার উপর ফর্মুলা তৈরি করে দিতে হবে। প্রাপ্ত তথ্য  এনালিসিস দ্বারা    সাংবাদিক সাহেব  লিখলেন এ জনরার সর্বকালের সেরা বইটি- থিংক এন্ড গ্রো রিচ। লেখক নেপোলিয়ন হিল তার সময়ের সেরা ৫০০জনকে ইন্টারভিউ করে ক্ষান্ত হননি, বিশ-পচিশ বছর ধরে এনালিসিস করেছেন  আরো ২৫০০০ মানুষের বৈশিষ্ঠ্য , সফলতার ও ব্যার্থতার কারণ।  ভালো লাগার ব্যাপার হল রিচনেসকে মিঃ হিল শুধুমাত্র ধনসম্পদ টাকা পয়সার দ্বারা নির্ধারণ করেননি। সম্পদ বলতে তিনি অর্থ বিত্তের পাশাপাশি সুখ্যাতি, নামযশ, পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স , স্পিরিচুয়াল গেইন, ভাল স্বাস্থ্য, সুন্দর পারিবারিক সুখী জীবনকে বুঝিয়েছেন। এই সম্পদ অর্জনের জন্য তিনি ধাপ...

বাংলায় ইসলাম প্রচারে সফল্যের ঐতিহাসিক কারণ

  মানুষের গভীরের অনুরণন শুনতে প্রয়োজন তার ইতিহাসের ইতিবৃত্ত জানা,  নৃতত্বের নতুনত্ব খুঁজে বের করা আর সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় কিভাবে তার আর্থ- সামাজিক-নৈতিক-ধার্মিক কলকব্জা গড়ে উঠেছে সেগুলোর বর্ণনা দূরবীন দিয়ে নয়- অনুবীক্ষণ  যন্ত্র দিয়ে আবিষ্কারের চেষ্ঠায় ব্রত হওয়া। প্রাগৈতিহাসিক এ বদ্বীপের  নদী-নালা  পূর্ণ স্যাতেস্যাতে উর্বর  মাটিতে সনাতন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম ছাপিয়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ১৮৭২ সালে প্রথম আদমশুমারিতে।  সারা ভারতীয় উপমহাদেশে ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু কাছাকাছি হওয়া সত্বেও বাংলা অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্যের কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকগণ নানামত দিয়েছেন এবং প্রত্যেকটি মত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে খারিজ করে দেয়া যায়। তবে মোটামুটি সবাই একমত হয়েছেন এদের সিংহভাগই নিম্নবর্গের হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা ধর্মান্তরিত হয়েছেন। এর কারিগর হলো এদেশে ১৩শ থেকে ১৭শ শতাব্দীতে আসা পীর- দরবেশ-সুফীরা। সংখ্যাগরিষ্ঠত নিয়ে বেশ  কয়েকটি মত পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলায় মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাওয়া, ব্রাক্ষণদের অত্...

চিন্তার ইতিহাসঃ মানুষ কিভাবে চিন্তা করতে শিখেছে?

  পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনবদ্য বিষ্ময়। একেবারে স্বাধীন ও আলাদাভাবে পৃথিবীর নানাপ্রান্তে প্রায় সমসাময়িক সময়ে মানুষের লিখিত দর্শনগুলো লিপিবদ্ধ হয়। একেকটির উৎপত্তির সাথে আরেকটির কোন স্বম্পর্কই ছিল না। আজ হতে প্রায় ২৭শত বছর পূর্বে ভারতীয় দর্শনের ভিত্তিমূল উপনিষদগুলো রচিত হয় অজানা লেখকদের হাতে। প্রায় সাড়ে পচিশশত বছর পূর্বে চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস তার দর্শন প্রচার করে গেছেন। সক্রেটিসদেরও আগে থেলিসের হাত ধরে গ্রিক তথা পাশ্চাত্য দর্শন শুরু হয় প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে। কাছাকাছি প্রায় ২৪০০/২৫০০ বছর আগে সিদ্ধার্ত গৌতমা নেপালের লুম্বিনি ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন নির্বাণ লাভের দীক্ষা দিতে। এই দর্শনগুলোই পরবর্তীতে ছডিয়ে ছিটিয়ে পড়েছে সারাদুনিয়ায়। মানুষ চিন্তা করতে শিখেছে তাদের দীক্ষায়। মনে কি প্রশ্ন জাগে? ভারতীয়দের নীতিনৈতিকতা, জীবনাচরণ, আর্থিক অবস্থা কেন পাশ্চাত্যদের মত নয়? চীন, কোরিয়া,তাইওয়ান,  জাপানসহ পূর্ব এশিয়ার  মানুষগুলোর সামাজিক ও আর্থিক চরিত্রগুলো এমন কেন? ভারতীয় ও চাইনিজদের অধিকতর আর্থিক ও সামাজিক শক্তি থাকার পরেও পশ্চিমারা কেন এনলাইটনমেন্টের উপর ভর করে শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে গিয়ে সারা...

বাঙালি মুসলমানের মন- এর অন্তর-বাহির

 ' বাঙালি মুসলমানের মন' সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত সমালোচিত একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। এতে নানা সময়ে  ছফার লিখা বারোটি প্রবন্ধ থাকলেও নাম প্রবন্ধটি বাঙলা সাহিত্যের একটি অন্যতম বিতর্কিত রচনা। এ প্রবন্ধে বাঙালি মুসলমানের নিম্ন নৈতিকতা, নিম্নরুচি,  লোভ, সংকীর্ণতা, নেতৃত্বগূনের অভাব ইত্যাদি ইতিহাসের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন উচ্চবর্ন হিন্দুদের অত্যাচারে নিম্নবর্নের হিন্দু ও গোড়া হিন্দুদের চাপে নির্যাতিত বৌদ্ধরা ইসলামগ্রহণ করেন। আব্বাসীয় খিলাফতের দ্বারা বাগদাদ, উমাইয়াদের দ্বারা স্পেনে ও ফাতেমিয়দের দ্বারা উত্তর আফ্রিকায় ইসলামী সভ্যতার আলো ও যে জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা এসেছিল তা বাংলা এলাকায় আসতে পারে নি। বরংচ, ৬০০-৭০০ সালের প্রকৃত ইসলামের পরিবর্তে একটু পরিবর্তিত ইসলাম এখানে এসেছে পীর ফকিরদের দ্বারা। দীর্ঘ সময় ভারতবর্ষে ইসলামী শাসন থাকলেও বাংলার মুসলমানরা রাজকার্য অংশগ্রহণে  ছিল ব্রাত্য। নিম্নবর্ণজাত  হওয়ার কারণে শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে ছিল, রাজকার্যে তাদের চেয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দুরাই প্রাধান্য পেত। যেসব মুসলমানদের কোন কারণে সরকারী কাজে অংশগ্রহণ করে উপরে উঠার সুযোগ ছিল তারা ...

সহজিয়া পথঃ তাও তে চিং

আজ হতে ২৬০০/২৭০০ বছর পূর্বে মহান দার্শনিক লাও ৎস শিখিয়েছেন কিভাবে প্রতিযোগীতাহীন শৈল্পিক নির্জনতার ও নিরাসক্ত আনন্দের  মধ্যে সুখী জীবনযাপন করতে হয়। কনফুসিয়াসের সমসাময়িক এ চৈনিক দার্শনিক সহজ-সরল ও পাশবিক উত্তেজনাহীন ভরপুর সুখী জীবনের কথা বলে গেছেন। তিনি নাগরিক  জীবন হতে ছুটি নিতে বা জীবন সংগ্রাম হতে  পলায়ন করতে বলেন নি, দিয়েছেন উদ্বেগ-উৎকন্ঠাহীন নিরাসক্ত আনন্দঘন জীবনের সন্ধান। তিনি বলেছেন মহান তাও অর্জনের  কথা। তাও সংজ্ঞায়নের বাইরে  এক স্বাধীন সার্বভৌম,  যাকে অনুভবে পাওয়া যায়, সাধনা করে অর্জন করে নিতে হয়। লাও ৎস তার ছোট ছোট পংক্তিমালার মাধ্যমে তাও খুঁজে পাওয়ার পথের সন্ধান দিয়েছেন। “যদি বা মুক্ত হও বাসনা থেকে   তবে রহস্যকে পাবে যদি পড়ে থাক বাসনাকে নিয়ে কেবলই পাবে প্রকাশ্যকে”/ তাও এর  সন্ধান দেখেছেন লাও ৎস নিরাসক্ততার মাঝে— / “যখন কিছু জাগে জাগতে দেন যখন কিছু লুপ্ত হয় বিলুপ্ত হতে দেন— তিনি প্রত্যাশা ছাড়াই কাজ করে যান’’। / “কিছু না, অনুশীলন করো, কোন চেষ্ঠা ছাড়াই সবকিছু পাবে”/ তাও অর্জনে লাও ৎস বলেছেন সঠিক কর্মপন্থার কথা । কি করতে হবে আর কি করা উন...