থিংক এন্ড গ্রো রিচ এর মর্মকথা

 উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ধনী  এন্ড্রু কার্নেগি।  বিশাল বিত্ত আয়ের গোপন ফর্মুলা  ও সফলতার গল্প শোনার জন্য একদিন এক তরুণ সাংবাদিক মিঃ কার্নেগির ইন্টারভিউ নিলেন। তিনি সাংবাদিকের উৎসাহ, জ্ঞানে মুগ্ধ হলেন। মিঃ কার্নেগি  সাংবাদিককে একটি দ্বায়িত্ব দিলেন। ঐ সময়ের বিখ্যাত ও বিত্তশালী ৫০০ জনকে ইন্টারভিউ করতে হবে, প্রাপ্ত তথ্য ও জ্ঞান হতে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে সফলতার উপর ফর্মুলা তৈরি করে দিতে হবে। প্রাপ্ত তথ্য  এনালিসিস দ্বারা    সাংবাদিক সাহেব  লিখলেন এ জনরার সর্বকালের সেরা বইটি- থিংক এন্ড গ্রো রিচ।

লেখক নেপোলিয়ন হিল তার সময়ের সেরা ৫০০জনকে ইন্টারভিউ করে ক্ষান্ত হননি, বিশ-পচিশ বছর ধরে এনালিসিস করেছেন  আরো ২৫০০০ মানুষের বৈশিষ্ঠ্য , সফলতার ও ব্যার্থতার কারণ।  ভালো লাগার ব্যাপার হল রিচনেসকে মিঃ হিল শুধুমাত্র ধনসম্পদ টাকা পয়সার দ্বারা নির্ধারণ করেননি। সম্পদ বলতে তিনি অর্থ বিত্তের পাশাপাশি সুখ্যাতি, নামযশ, পলিটিক্যাল ইনফ্লুয়েন্স , স্পিরিচুয়াল গেইন, ভাল স্বাস্থ্য, সুন্দর পারিবারিক সুখী জীবনকে বুঝিয়েছেন। এই সম্পদ অর্জনের জন্য তিনি ধাপে ধাপে তেরটি গুন বা বৈশিষ্ঠ্য অর্জন ও রপ্ত করতে বলেছেন। মডার্ন মোটিভেশনাল স্পিকারদের মত করে তিনি শুধু উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলেননি। বলছেন, কি করলে ধাপে ধাপে একজন সফল চাকুরে বা কর্মী হওয়া যাবে, চাকুরির বাজারের জন্য নিজেকে তৈরি করা যাবে। কি করতে হবে এটা জানানোর পাশাপাশি আমাদের কোন বিষয়গুলো কোন পর্যায়ে কিভাবে এভয়েড করতে হবে জানিয়েছেন।  তবে স্কুল কলেজ ভার্সটিতে কোন দেশেই খুব বেশী শিখানো হয় না। পরিবার , আশেপাশের পরিবেশ ও নিজে চেষ্ঠার মাধ্যমেই সফলতার বৈশিষ্ঠ্যগুলো রপ্ত করতে হয়।

প্রথম বৈশিষ্ঠ্য বলতে তিনি বলতে চেয়েছেন ইচ্ছাশক্তিরর কথা। তবে বইটির মূল থিম ঘুরেছে নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে।  মনের শক্তিকে নিজমত পরিচালনা ও কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে সাফল্যের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।  আপনার সফলতার , ব্যার্থতা দারিদ্রতা, প্রাচুর্যতার দায়িত্ব আপানাকেই নিতে হবে। আর এ জন্য যত দ্রুত আপনি শুরু করবেন আপনার সময় বেশি পাবেন। সফলতার গুনগুলো একবার রপ্ত হয়ে গেলে , এগুলো আপনার সেকেন্ড নেচার হয়ে যাবে , আপনার সিস্টেমে অটোমেটিক ঢুকে যাবে। আপনি একটি ফ্লোতে চলে আসবেন। আপনার ব্যার্থতা মেনে নিয়ে আবার শুরু করা শিখবেন। তবে শুরু করার জন্য দেরি বলে কিছু নেই, কোন অবস্থাতেই হার মানার সুযোগ নেই। 

লেখকের এনালিসিস মতে বেশিরভাগ মানুষের বড় সাফল্যগুলো আসে ৪০-৬০ বছরের মধ্যে। এর আগের সময়ের মধ্যে প্রস্তুতির মধ্যেই চলে যায়, ট্রায়াল-এরর এর মধ্যে থেকে আপনি ব্যাক্তিগত ধারণা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করতে থাকবেন। নিজে একা বেশি দূর যাওয়া কঠিন। একটি কোর গ্রুপ ওফ কম্পিটেন্ট মাস্টার মাইন্ডস আপনার সফলতাকে সহজ করে দেবে। এরা হতে পারে পেইড এমপ্লয়ি, বন্ধু বা পরিবারের কেউ। অবাক করে দিয়ে সফলতার পেছনে লাভ সেক্স হেলদি ফেমিলি লাইফকে  গুরুত্বপুর্ন উপাদান , প্রণোদনা হিসেবে দেখানো হয়েছে বইতে।

প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তিকে ব্যাবহার করে নিজের উপর আস্থা তৈরি করতে হবে। আপনার ইমাজিনেশন ব্যার্থতার স্থান থাকবে না, সাবকনশাস মাইন্ডে আপনার সুত্রগুলো ইন্সটল করা থাকবে, কষ্ট করে নতুন কিছু করতে হবে না। আপনি জানবেন আপনি রিচনেস পাবেন, আজ বা কাল।

মানুষের ৬টি বেসিক ভয় আছে । এগুলো হলোঃ ব্যার্থতার ভয়, সমালোচনার ভয়, স্বাস্থ্যঝুকির ভয়, প্রিয়জন বা তাদের ভালোবাসা হারানোর ভয়, বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় ও মৃত্যুভয়। কিছু ভয়কে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে বাকিগুলো জয় করা যায় নিজের মনের শক্তির জোরে, আপনার গড়ে তোলা শক্তিশালী সাব-কন্সাস মাইণ্ডের দুর্গের শক্তিতে। আপনার মনকে যা বোঝাবেন, আপনার নিজের সাথে যে কথাগুলো বলবেন, আপনার ইচ্ছেগুলোকে যেভাবে ডানা মেলাবেন, সেগুলোই ভবিষ্যতের আপনি ।


মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক পঠিত

আধুনিক আমলাতন্ত্র: ওয়েবার থেকে ইভানস

চেপে রাখা অর্থণীতি: মুক্তবাজারের মিথ্যাবাজার

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?

ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রচিন্তা: আলথুসেরের রাষ্ট্রপাঠ