সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?
ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর শুধু খুজেই গেছি, বিভিন্ন সোর্সে ঢু মেরেছি, বেশিরভাগ সময় কনফিউজড হয়েছি। কোথা থেকে আসল শিয়া -সুন্নি, হানাফি, হাম্বলি, শাফেয়ী, আহলে হাদিস, সুফিবাদ, তাব্লীগ, পীরবন্দনা ইত্যাদি নানা জানা অজানা ভাগ -উপভাগ? ফাজায়েলে আমল, ফাজায়েলে জিকির, মুক্সুদুল মুমিনীন, সিহাহ সিত্তাহ সহ নানা প্রখ্যাত- অখ্যাত হাদিস, ফিকাহ, তাফসির বই এ লেখা একেক দর্শন, ব্যাখ্যা, সমাধান, নির্দেশনা মাঝে মাঝেই কনফিউজিং মনে হয়েছে৷ একেকটার সাথে আরেকটা মেলে না, কিছু সরাসরি জানাশোনা কোরানের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হত।
আমাদের প্রচলিত আচার, অনুষ্ঠান, উতসব, পোশাকি, কালচার, জমায়েত, হুজুর, মুরুব্বী, গ্রুপিং ভিত্তিক ধর্মচর্চা কতটা সঠিক? আল্লাহ তায়ালা যেখানে কোরানকে কম্পলিট ও ডিটেইল জীবনাদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছেন কিন্তু কোরানের ব্যাখ্যা বা অস্পষ্টতার দোহাই দিয়ে সহস্র অপ্রয়োজনীয় হাদিস, তাফসির, ফিকাহ, ইজমা কিয়াস দিয়ে ধর্মকে কতটা কলুষিত করেছি? এসবের কোরানিক ভিত্তিটাইবা কি? আর এ পলু্শনগুলো কখন কিভাবে হয়েছে?
আল্লাহ তায়ালা নিজেই যেখানে বিশ্বাস ও সতকর্মকে জান্নাতের পূর্বশর্ত দিয়েছেন, বলেছেন যারা বিনয়ী, কষ্টের মধ্যেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত দান করে, পরোপকার করে, ওজনে কম দেয় না, বিপদে অভাবে ধৈর্য ধারন করে, খারাপ কাজে লিপ্ত হয় না তাদের জন্য পুরষ্কার ঘোষণা দিয়েছেন। দান কাকে কিভাবে করতে হবে সব ডিটেইলস দিয়ে দেয়া হয়েছে। কাদের জন্য শাস্তি দেয়া আছে তা জানার জন্য কোরান এর বাংলা অনুবাদ পড়াই যথেষ্ঠ। কোন পীরের মুরিদ হওয়া, বেহেস্তরে হুরপরীর জন্য অন্যদের বোমা মারা, ঘৃণা করা ধর্মের কোন শর্তের মধ্যেই পড়ে না। আমরা যেভাবে মুসলিম হিসেবে নিজেদের সংজ্ঞায়িত করি এবং বাকিদের জোর করে বাতিল হিসেবে ঘোষণা দেই, আল্লাহ সরাসরি এ ব্যাপারে কি বলেছেন?
নমাজ বেহেস্তের চাবি, বিদ্যা অর্জনের জন্য চীন দেশে যাওয়া এসব হাদিসের ভিত্তি কি, জিহাদ, মদ, হালাল হারাম, মেরাজ ইত্যাদির নির্দেশনা কি, কোরান কি বলে? নারীদের নেকাব- পর্দা, ছেলেদের দাড়ি, টুপি আসলেই কতটুকু ধর্মের অংশ, কতটুকু বাড়াবাড়ি আর, এ ব্যাপারে কোরান কি বলে? ইসলামের পাচ রুকন কথাটার ভিত্তিটাইবা কি? প্রচলিত নমাজের উতপত্তি ও কোরানে এ ব্যাপারে কি নির্দেশনা আছে?
সজল রোশানের বই ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট - বিশ্বাসের ঢেকি গেলা' এসব নিয়েই চমতকার আলোচনা করেছেন। পড়লে আপনার সব বিশ্বাস করতে হবে না, নিজের মত করে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সবচেয়ে ভাল লেগেছে তিনি সবকিছু কোরানের আয়াত দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন এবং বাংলায় কোরান পড়ার ব্যাপারে জোর দিয়ে এর মর্মার্থ বের করতে বলেছেন। ভাল লেগেছে, তিনি বিশ্বাসের অংশটুকু বিশ্বাস হিসেবেই দেখতে বলেছেন, এগুলো বিজ্ঞান নাসা রিলেটিভিটি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টাকেই তিনি কোরানের দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তাকে ভয়ংকর হিসেবে না দেখে ভালবাসার পথ নির্দেশক হিসেবে দেখিয়েছেন।
বইটি গোগ্রাসে পড়েছি, ধর্ম নিয়ে যারা ভেতরের সত্যটা জানতে চান বুঝতে চান তাদের জন্য হাইলি রেকমেণ্ডেড। এথেইস্ট, এগনোস্টিক, নন মুসলিমরাও জ্ঞান বাড়ানোর জন্য পড়ে দেখতে পারেন।

ধর্ম ব্যাপারটা খুব সেনসেটিভ। আমাদের দেশের মানুষ কোন কিছুরই ভেতরে যেতে বা কষ্ট করতে চাই না। তাই শুনে বা দেখে অনেক অনেক ভুল বা অপব্যাখ্যা সমৃদ্ধ বিষয় লিগালাইজ করে ফেলেছে। যা শুধু আমাদের ধর্মে নই সেই সাথে জীবন, সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে।
উত্তরমুছুনসজল রোশন বইটি অত্যন্ত চমৎকার লিখেছেন।বিষেশ করে বর্তমান পেক্ষাপটে অত্যন্ত যোগউপযোগী। তবে বইটি আরো ভালো হবে মর্মে আমি মনে করেছি। বিষেশ করে কিছু কিছু যায়গার ধারাবাহিতকার একটু ঘাটতি ছিল। তবে সব মিলিয়ে বইটি অত্যন্ত চমৎকার।
উত্তরমুছুনthanks a lot for your nice comments
উত্তরমুছুন