ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রচিন্তা: আলথুসেরের রাষ্ট্রপাঠ
প্রত্যেক সমাজের একটি মোড অফ প্রোডাকশন বা উৎপাদনের প্রক্রিয়া, পদ্ধতি ও ধরন রয়েছে । মোড অফ প্রোডাকশন বা উৎপাদন ব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত থাকে। পুঁজিবাদী সমাজ টিকে থাকে এই শর্তসমূহের পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে। চলমান পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা দুটি জিনিস পুনরুৎপাদন করে থাকে: একটি হলো উৎপাদনের পদ্ধতি ও শক্তিসমূহের পুনরুৎপাদন, অন্যটি হলো উৎপাদনের বর্তমান সম্পর্কের পুনরুৎপাদন।
মজুরির মাধ্যমে শ্রমশক্তির পুনরুৎপাদনের বন্দোবস্ত করা হয়। শ্রমিক তার মজুরির মাধ্যমে সন্তান-সন্ততিদের বড় করে তুলে ভবিষ্যতের শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। যে মেশিনগুলো দিয়ে উৎপাদন করা হয় সেগুলো পুনরুৎপাদন করাও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জরুরি একটি অংশ।
আদর্শ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শিশুকাল হতেই বিদ্যালয়ে পাঠানো হয় এবং প্রয়োজনমতো শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করানো হয়। এতে তারা পুঁজিবাদী উৎপাদন সংস্কৃতির সাথে ধাতস্থ হতে পারে, উৎপাদনের আদব-কায়দা শিখতে পারে। গড়ে ওঠা শ্রমবিভাগ নিবিড় ভাবে পালন করার জন্য, মান্য করার জন্য, দক্ষ করে তাদেরকে তৈরি করা হয়।
তবে শুধুমাত্র শারীরিক শক্তি ও দক্ষতায় পুনরুৎপাদন যথেষ্ট নয়, প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার প্রতি নি:শর্ত আনুগত্যের ব্যবস্থা করাই হচ্ছে শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদনের অন্যতম প্রধান প্রভাবক। শ্রমশক্তির নিঃশর্ত আনুগত্যই যথেষ্ট নয়- তাদেরকে শাসকের ভাবাদর্শের প্রতিও সম্পূর্ণরূপে অনুগত থাকতে হবে। শাসন, শোষণ এবং নিপীড়নের কাজে এ ভাবাদর্শগুলোকে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে দরজা সর্বদাই খোলা রাখতে হবে।
স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মতাদর্শিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কলকব্জা বা হাতিয়ার হিসেবে ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। পুঁজিবাদী সমাজের পেশাজীবীরা ভাবাদর্শগতভাবেই কেউ শোষক, কেউ শাসিত, আবার কেউ শোষকের সহযোগীর ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে সামাজিক উৎপাদনের অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে ভাবাদর্শ ও নাগরিকের উপর ভাবাদর্শের প্রভাব।
মার্কসীয় চিন্তায় রাষ্ট্র, আইন ও ভাবাদর্শ হচ্ছে হচ্ছে উপরিকাঠামো বা সুপার-স্ট্রাকচার। এখানে প্রথম স্তরে রয়েছে রাষ্ট্র ও আইন, পরের স্তরে রয়েছে ভাবাদর্শ। ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক, আইনগত ইত্যাদি ভাবাদর্শের উপর একটি সমাজের উপরিকাঠামো [Super-structure] তৈরি হয়। এইসব উপরিকাঠামোর মাধ্যমেই সমাজের অবকাঠামো [ Base] অর্থাৎ অর্থনৈতিক ভিত্তি পরিচালিত হয়।
মার্কস , অ্যাঙ্গেলস ও লেলিন এ তিনজনই রাষ্ট্রকে দেখেছেন নিপীড়নকারী যন্ত্র বা সত্তা হিসেবে। রাষ্ট্র মানে সংখ্যালঘিষ্ঠ অল্পকিছু ব্যক্তিবর্গ/শাসকগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বিস্তৃত মেহনতি মানুষের উপর অধিপত্য কায়েমের বন্দোবস্ত। শ্রমিক শ্রেণীর শ্রম-ঘাম থেকে প্রাপ্ত উদ্ধৃত্ব মূল্য আহরণ ও ভোগের বন্দোবস্তই শাসক শ্রেণীর মূল লক্ষ্য। পুলিশ, আদালত, কারাগার, সশস্ত্রবাহিনী শাসকশ্রেণীর পক্ষে কাজ করে। যে শ্রেণীর হাতে এ যন্ত্রগুলো থাকে তারাই প্রলেতারিয়েতের বিপক্ষে এগুলো সহিংস ও দমনমূলকভাবে ব্যবহার করে।
রাষ্ট্র মানেই শ্রেণী রাষ্ট্র। শ্রেণী সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল। ক্ষমতা ধরে রাখতে গেলে শুধুমাত্র রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ রাখাই যথেষ্ট নয়, ভাবাদর্শিক কর্তৃত্বও জরুরী। লুই আলথুসেরের মতে, এই ভাবাদর্শিক কর্তৃত্বের জন্য রাষ্ট্রের দমনমূলক কলকব্জাগুলোর ( Repressive State Apparatuses- RSA) বাইরেও ভাবাদর্শিক কলকব্জাগুলোর (Ideological State Apparatuses- ISA) উপর নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরী ।
আলথুসের পূঁজিবাদী রাষ্ট্রের হাতিয়ার বা কল্ককব্জাসমূহকে পরিষ্কারভাবে দুই ভাগে ভাগ করেছেন: ভাবাদর্শিক [ISA] ও দমনমূলক [RSA]।
লুই আলথুসেরের আগে অন্যান্য মার্কসিয় চিন্তাবিদরা দমনমূলক কলকব্জা নিয়ে আলোচনা করলেও ভাবাদর্শিক জায়গাটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেন নাই। অর্থাৎ পুলিশ, আদালত, কারাগার, সশস্ত্র বাহিনী ইত্যাদি হচ্ছে দমনমূলক হাতিয়ার বা কলকব্জা [RSA]; অন্যদিকে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্ম প্রতিষ্ঠান, পরিবার, গণমাধ্যম, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়নসহ নানা মতাদর্শিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ভাবাদর্শিক হাতিয়ার বা কলকব্জা [ISA]। দমনমূলক হাতিয়ারগুলো পাবলিক সার্ভিস চরিত্রের আর ভাবাদর্শিক হাতিয়ারগুলো অনেকটা ব্যক্তিগত পরিসরে কাজ করে। ভাবাদর্শিক হাতিয়ারসমূহ প্রধানত ব্যক্তি ও সমাজকেন্দ্রিক হয়ে থাকে এবং দমনমূলক হাতিয়াগুলো রাষ্ট্রীয়বাহিনী বা সংস্থা হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রের আইন ও আইনগত প্রতিষ্ঠানসমূহ মূলত দুই ধরনের কলকব্জা হিসেবে কাজ করে। শুধুমাত্র যেকোনো এক ধরনের কলকব্জা দিয়ে প্রতিষ্ঠানসমূহ চলতে পারে না। ভাবাদর্শ এবং সহিংসতার [RSA+ISA] সংমিশ্রণে গড়ে উঠে প্রতিষ্ঠান। যেমন পুলিশ, কারাগার, বিচার বিভাগ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান ন্যায্যতা, মূল্যবোধ, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, মানবাধিকার এসব আদর্শিক কনসেপ্টগুলো ব্যবহার করে দমন ও নিপীড়ন চালায়। শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাবাদর্শ শিক্ষা দিলেও, তারা শৃঙ্খলার প্রয়োজনে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।
তবে রাষ্ট্রই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যা আইনের উর্ধ্বে।
দমনমূলক কলকব্জাগুলো [RSA] অনেক বেশি সংঘটিত, ঐক্যবদ্ধ এবং কেন্দ্রীভূত, অন্যদিকে ভাবাদর্শিক হাতিয়ারগুলো [ RSA] অনেক বেশি ডায়নামিক। বাছাই ও প্রস্তুতকরা লোকজন রাষ্ট্রের পক্ষে দমনমূলক সংগঠনগুলো পরিচালনা করে।
শুধুমাত্র দমনমূলক কলকব্জা দিয়ে কোন গোষ্ঠী একটি রাষ্ট্রকে দীর্ঘদিন শাসন করতে পারে না। ভাবাদর্শিক কলকব্জাগুলোকে সঠিকভাবে গুলে খাইয়ে জনগণ থেকে দমনমূলক কলকব্জার বৈধতা আদায় করে নেয়া হয়। এমনকি ফলিত মার্কিস্ট লেলিন ও মাওসেতুং শিক্ষা ও সংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন ভাবাদর্শিক কলকব্জাগুলোকে নিজেদের চিন্তা ও তত্ত্বের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
দমন মূলক কলকব্জাগুলো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোটিকে ধরে রাখে। ভাবাদর্শিক হাতিয়ারগুলো রাষ্ট্রের কাজে রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে, চলমান উৎপাদন সম্পর্কের পুনরুৎপাদনে কাজ করে, বিশেষ কিছু দল বা গোষ্ঠীর বারবার ক্ষমতা বা নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নিশ্চিত করে। তাদের মতাদর্শগুলো কেন্দ্রীভূত হয়ে থাকে ভাবাদর্শিক হাতিয়ারে।
শাসক শ্রেণী সর্বদাই RSA ও ISA গুলোর মধ্যে সমন্বয় করে শোষণ ব্যবস্থা ধারাবাহিক রাখে। তারা তাদের সকল উপায়কেই গণতান্ত্রিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে। ক্রীড়া ও সংস্কৃতির পরিসরে জাতীয়তাবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের একটা মহড়া থাকে। সম্মতি আদায়ের জন্য কখনো কখনো পার্লামেন্ট, গণভোট ইত্যাদির একটা আবরণ থাকে, প্রয়োজনে ছন্দবেশী ফ্যাসিবাদী চর্চা হয়ে থাকে। মানবিক মূল্যবোধ, ব্যক্তিস্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ , উদারনৈতিকতা, গণতন্ত্র ইত্যাদির আলাপ তুলে শোষিত শ্রেণীর চোখে ধুলো দেয়া হয়।
শাসক শ্রেণীর শাসনের বৈধতা আদায়ের অন্যতম ভাবাদর্শিক হাতিয়ার হচ্ছে পূর্বপুরুষ বা বা অতীত ইতিহাসের মহিমা গাঁথা প্রচলন করা। যাদেরকে শাসন করা হচ্ছে তাদেরকে গৌরবান্বিত বোধ করানোর জন্য পূর্বপুরুষদের বিস্ময়কর কল্পকথা ও গৌরবগাঁথা মুখস্ত করানো হয়। মরে গেলে সবাই মাটিতে মিশে যাবে, তারপর যা হবে ওই পারে; শাসকের রাজি-খুশি অর্জনের চেষ্ঠা, আত্বত্যাগ করা নাগরিকের ধর্মীয় দায়িত্ব- ইত্যাদি ভাবাদর্শিক শরবত গেলানোর মাধ্যমে শাসকদের শাসনের ন্যায্যতা তৈরি করা হয়।
দমনমূলক হাতিয়ারগুলো স্থবির প্রকৃতির, ভাবাদর্শিক হাতিয়ারগুলো গতিশীল। পুঁজিবাদ উত্থানের আগে ইউরোপে চার্চ ছিল প্রধান ভাবাদর্শিক হাতিয়ার। চার্চের হাতে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা দিনে দিনে এ কালের সংবিধান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠা্ন, মিডিয়া, ওয়াজ মাহফিল, সভা সেমিনার ইত্যাদিতে দ্রবীভূত হয়েছে। তবে দিনশেষে এগুলোর কাজ একই– চলমান উৎপাদন সম্পর্কগুলো অব্যাহত পুনরুৎপাদন করা, যাতে শোষণ ধারাবাহিকভাবে চলতে পারে।
আধুনিক যুগে বুর্জোয়াদের জন্য মহাজরুরী ও সবচেয়ে কার্যকর ভাবাদর্শিক হাতিয়ার হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিশু অবস্থায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ভবিষ্যৎ শ্রমিকরা শাসকদের পছন্দের এবং প্রয়োজনের আদর্শে মোড়ানো বাণীগুলোই শিখে থাকে। ইতিহাস, দর্শন, সমাজ ইত্যাদি পড়ানোর নামে ভাবাদর্শের আফিম ডোজ দেয়া হয়। অধিক পন্ডিত টাইপের ব্যক্তিদের শাসকদের চেলা হিসেবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুরুব্বী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এখান থেকেই তৈরি হয় নেতা, সামরিক-বেসামরিক কর্তা, ম্যানেজার, সিইও, যাদের কাজ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার খুঁটিকে শক্ত করে ধরে রাখা। এরা মূলত শোষণের হাতিয়ার, এরা নিজেরা যেমন অনুগত থাকে– অন্যদেরকেও পুঁজিবাদী শক্তির অনুগত হতে বাধ্য রাখতে পারে।
আনুগত্যের শিক্ষা, নমনীয়তার পাঠ ইত্যাদির পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা, চাটুকারিতা, চালাকি, নার্সিসিজম, ফান্ডামেন্টালিজম শোভিনিজম ও ন্যাশনালিজমের বুলি মুখস্ত করানো হয়। পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীদের দেখানো হয় মুক্ত স্বাধীন পাখি, শিক্ষকদের দেখানো হয় জাতির বিবেকের মেরুদন্ডের কশেরুকা। পরিবারের মধ্যেও নানা উপায়ে ভাবাদর্শিক শিক্ষা দেওয়া হয়।
পুজিঁতান্ত্রিক শোষণযন্ত্রের মধ্যে বিদ্যালয়, পরিবার ও সমাজ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার সরাসরি যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্জিত জ্ঞানে যতটুকু গ্যাপ থেকে যায়, শিক্ষানবিশ কালে বাকি শিক্ষাটুকু দিয়ে দেয়া হয়।
মানুষের ইতিহাস শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। ক্ষমতাধর শাসকরা ইতিহাসের পাতায় নিজেদেরকে দায়িত্বশীল প্রমাণের জন্য নিজস্ব ভাবাদর্শ নির্মাণ করে। নির্মান যাত্রায় তাদের পাশে থাকে ধর্মীয় নেতারা, শাসকের ক্ষমতার সৃষ্টভোগী সামরিক-বেসামরিক আমলারা, পুঁজিবাদী শক্তির ম্যানেজার, সিইওরা।
মানুষ ভাবাদর্শী কাঠামোতে জন্ম গ্রহণ করে, জন্ম মানেই কোন ভাবাদর্শের ভেতর দিয়ে খেয়েপড়ে বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকে যে ধর্মীয় পরিসরে আমরা বেড়ে উঠি তার সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে আমরা এর মাধ্যমে আইন মানতে শিখি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখি। এ পদ্ধতি একই সাথে শাসকের শাসনকে সম্মতি দেয়, আনুগত্য আদায় করে নেয়, সুবিধা করে দেয়। এর মাধ্যমে উৎপাদন সম্পর্কের পুনরুৎপাদন ঘটে। শ্রেণী বিভক্ত সমাজ কাঠামো স্থায়ী রূপ লাভ করে।
লুই আলথুসের কার্ল মার্কসের বয়ানকে অপ্রতুল মনে করতেন। বিশেষ করে তিনি রাষ্ট্রের বুনিয়াদ ( বেইজ) ও উপরি কাঠামো( সুপার স্ট্রাকচার) এর উপর সম্প্রসারিত আলোচনা তুলে ধরেন। তার মতে উপরিকাঠামোকে সজীব রাখতে পারে শক্তিশালী ভাবাদর্শ। মার্কসকে অসম্পূর্ণ মনে করতেন আলথুসের।
মার্কসের তত্ত্বকে আরো বিকশিত না করলে এর মধ্যে বুর্জোয়া প্রভাব থেকে যাবে বলে মনে করতেন আলথুসের। আলথুসেরের মতে, তরুণ কার্ল মার্কস অনেকটা ফয়েরবাখ এবং হেগেলের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে মার্কস একজ বিজ্ঞানসম্মত তাত্ত্বিকে পরিণত হন।
ফরাসী দার্শনিক লুই আলথুসের ছিলেন বিপ্লবী: চিন্তায় ও কাজে। তিনি কাগজ কলমে লিখতেন, আবার মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতেন। মানুষের চিন্তা, কর্ম, অনুভবের ভেতর সামাজিক কাঠামোর প্রভাব কিভাবে কাজ করে সেটাই দেখায় স্ট্রাকচারালিজম। এটিকে আলথুসের তত্বীয়ভাবে চিন্তা না করে তিনি সরাসরি রাষ্ট্র সংস্কারে অংশগ্রহণ করার জন্য পার্টি রাজনীতি করেছেন। তার মতে, একটি নতুন সমাজ নির্মাণ করার জন্য নতুন ধরনের উৎপাদন সম্পর্কে প্রয়োজন এবং সেটি গড়ে উঠতে পুরনো উৎপাদন সম্পর্কের সম্পূর্ণ ধ্বংস করা দরকার।
আলথুসের রাষ্ট্রকে দেখতেন দমনমূলক ও ভাবাদর্শমূলক কলকব্জার সমন্বয় হিসেবে। আপাত দৃষ্টিতে ভিন্নতা সত্ত্বেও এই কলকব্জাগুলো মিলে তৈরি করে শাসক ভাবাদর্শ, যার মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় বলয়সমূহে হেজিমনি কায়েম করে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে প্রয়োজনীয় কার্যকর সুরক্ষা প্রদান করে।
শুধুমাত্র অধিপতি শ্রেণীর ভাবাদর্শ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারলেই শোষিত শ্রেণীর সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জিত হবে।
(লুই আলথুসেরের বাইরে ফলিত মার্কস নিয়ে যারা চিন্তা করেছেন, মার্কসকে সম্পূর্ণ করার জন্য ক্রিটিক করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন গ্রামসি ও লেলিন। গ্রামসির রাষ্ট্রভাবনা নিয়ে এর আগে একটি লেখা লিখেছিলাম। গ্রামসির হেজিমনি কনসেপ্টের সাথে আলথুসেরের ভাবাদর্শিক হাতিয়ারের [ISA] একটা সম্পর্ক সেখান থেকে পাবেন। পরবর্তীতে লেলিনের মার্কস ক্রিটিক ও প্রায়োগিক কাজগুলো নিয়ে আরো একটি লেখার ইচ্ছা রয়েছে ।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন