আধুনিক আমলাতন্ত্র: ওয়েবার থেকে ইভানস

সূত্র:

প্রুশিয়ার ইতিহাস (১৬ শতক থেকে ২০ শতকের প্রথমার্ধ) ইউরোপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।  একটি ছোট সামন্ততান্ত্রিক অঞ্চল হিসেবে শুরু করে, পরবর্তীতে এটি জার্মানির সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয় এবং জার্মান একীকরণের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠে।  সামরিক নিয়ন্ত্রণ, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি, এবং ইউরোপীয় ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রুশিয়ার প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে। প্রুশিয়া আজ আর রাষ্ট্র হিসেবে নেই, তবুও ইউরোপের ইতিহাসে এর গভীর প্রভাব রয়েছে।



ফ্রেডরিক দ্য গ্রেট (১৭৪০-১৭৮৬) প্রুশিয়াকে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেন। ওটো ভন বিসমার্ক জার্মানির একীকরণের প্রধান কারিগর ছিলেন। ১৮৭১ সালে ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের পর প্রুশিয়া জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, এবং প্রুশিয়ার রাজা উইলহেম প্রথম জার্মানির সম্রাট হিসেবে ঘোষিত হন।  প্রুশিয়া জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে পরিণত হয়।



প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির পরাজয়ের ফলে ১৯১৮ সালে জার্মান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং প্রুশিয়ার রাজতন্ত্রের অবসান হয়। ১৯১৯ সালে ভেইমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রুশিয়া তার স্বাধীনতা হারায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৭ সালে মিত্রশক্তি প্রুশিয়া রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। 




ওয়েবার এর প্রস্তাবনা: 



 আধুনিক আমলাতন্ত্র সম্পর্কে ম্যাক্স ওয়েবারের যে প্রস্তাবনাগুলো পাই, তিনি ধারণাগুলো পেয়েছিলেন প্রুশিয়ার সফল ও কার্যকর আমলাতন্ত্র থেকে। ওয়েবার মারা যান ১৯২০ সালে, প্রুশিয়া বিলীন হয়ে যায় একিভূত জার্মানির মধ্যে, ১৯৪৭ সালে।  

 


প্রুশিয়ার তৎকালীন শাসক ফ্রেডরিক উইলিয়াম (১৬৪০-৮৮) ৩০ বছরব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে যান।  যুদ্ধের অর্থসংস্থানের জন্য তাকে ডায়েট বা পার্লামেন্টের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এগুলো বাদ দিয়ে  তিনি আইন করে নিজস্ব রেভিনিউ সার্ভিস গঠন করেন। পূর্বে  বিভিন্ন  অভিজাতগণ বিভিন্ন শহর বা অঞ্চল শাসন করতো,  তাদের বাদ দিয়ে তিনি  নিজের পছন্দের স্হায়ী জনবল নিয়োগ শুরু করেন। 



যুদ্ধ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা একীভূতকরণের মাধ্যমে প্রুশিয়াতে কেন্দ্রীভূত আমলাতন্ত্র শুরু হয় ১৭২৩ সালে। শহরগুলোকে অভিজাততন্ত্র থেকে বের করে এনে কেন্দ্রীয়শাসনের অধীনস্ত  করার পর ওইসব অভিজাতগণকে দূরবর্তী স্হানে প্রশাসনিক পদে পদায়ন করা হয়।  সাধারণ জনগণকে অভিজাত প্রশাসনিক পদে ওঠার সুযোগ করে দেন রাজা। শুরুর পদে বেতন কম থাকলেও পরবর্তীতে বিশ্বস্ত ও যোগ্য সার্ভিসের বিনিময়ে উচ্চতর পদে প্রমোশন দেয়া হতো। 

ফ্রেডরিক-২ এদেরকে মনিটর করার জন্য গোয়েন্দা নিয়োগ করেন।  শিক্ষা এবং মেধাকে মূল্যায়ন করে অভিজাতন্ত্র ও চার্চের প্রভাব সংকুচিত  করা হয়। নাগরিকবান্ধব প্রশাসন চালু করা হয়।



  ফ্রেডরিক জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প (১৭৬৩), ভূমি সংস্কার,  শুল্ক আবগারি সংস্কার,  ফৌজদারি আইন চালু করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।



 ১৭৭১ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে সিনিয়র পদে কর্মকর্তা নিয়োগ করা শুরু হয়। এর ফলে নিয়োগকৃতরা অধিকতর স্বতন্ত্রভাবে ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পান।  এসব সংস্কার কার্যক্রমের ফলে প্রুশিয়ার মধ্যস্থতায় জার্মানি একিভূত হয় ও অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংঘটিত হয়।  এসব নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা বেশ কিছু সমস্যার তৈরি করে। যেমন মধ্যবর্তী ধাপের কর্মকর্তারা রেলওয়ে সংস্কারসহ বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে। 



নানা উন্নয়ন কার্যক্রম করলেও  এ আমলাতন্ত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্টভাবে দেশকে তৈরি করতে পারেনি। হিটলার এসে তার মতবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের পদাবনতি, বরখাস্ত করার আইন করেন। 



  ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষে  পরাজিত জার্মানিতে ১৯৪৯ সালে আমেরিকান প্রেসক্রিপশনে তৈরিকৃত সংবিধান চালুর মাধ্যমে আমলাতন্ত্র  আবার আগের অবস্থান ফিরে পায়। 




ম্যাক্স ওয়েবার প্রুশিয়ায় প্রচলিত আমলাতন্ত্রে দেখতে পান দক্ষ,  স্থায়ী বেতনভুক্ত,  প্রশিক্ষিত ও চুক্তিবদ্ধ  চাকুরিজীবী গোষ্ঠিকে। এদের নিয়োগ ও পদোন্নতি হয় মেধার ভিত্তিতে, কাজ করে সুনির্দিষ্ট আইনের ভেতর। কর্মে নিয়োজিত সকল চাকরিজীবীর আচার-আচরণ ও ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণা হবে তার কর্ম ও নিয়োগের সাথে সংগতিপূর্ণ। সুনির্দিষ্ট হায়ারার্কি থাকবে। 



আগে যা ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ওয়েবারের অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাবনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে সরকার, প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান। 



শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয়  সিভিল প্রশাসন নয়, আর্মি, পুলিশ, বিচার বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার বা যারা উপরের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে, তারা সকলেই আমলাতন্ত্রের অংশ। 



 ওয়েবার এই আদর্শ বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে প্রয়োজনের নিরিখে সামান্য বিচ্যুতি উৎসাহিত করেছেন। তিনি তার তত্ত্বে সে সময়ে প্রচলিত ব্রিটিশ, আমেরিকান ও জাপানের প্রচলিত আমলাতন্ত্রের বিশ্লেষণ করেছেন।



ব্রিটিশ প্রশাসন :



অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনের  শাসন ব্যবস্থা  পরিচালিত হতো মূলত অভিজাত ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে।  রাজার শক্তিকে সুসংহত করার জন্য বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে রাজার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদে মনোনয়ন প্রদান করত ।  ভুলভাল নিয়োগ দিলে প্রধানমন্ত্রীর চাকরি চলে যেত। 



 ১৭৪০ এবং ১৭৫০  এর দশকে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়,  সে সময়ে ভূমিকর অনেকটাই কমে গিয়েছিল। স্ট্যাম্প ডিউটি, শুল্ক-আবগারিসহ নানা পরোক্ষ করের মাধ্যমে সেনা শক্তির বাড়তি চাহিদা মোকাবেলা করা হয়।

 


আমেরিকাতে কলোনি হারানোর পর নানা ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ১৭৮০ সালে পার্লামেন্টের অধীনে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিশন গঠন করা হয়। বেসামরিক  কর্মে নিয়োজিত সকলের লিস্ট কমিশনের অধীনস্থ করা হয়।  পাবলিক একাউন্টস কমিশনের  রিপোর্টে (১৭৮০-৮৬) প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করার প্রস্তাব দেয়া হয়।  প্রধান প্রস্তাবগুলো ছিল: প্রতিনিধির মাধ্যমে নয়—- ব্যক্তিকে নিজে কাজ করতে হবে,  বেতন নির্দিষ্ট  করা হবে,  সুনির্দিষ্ট কঠোর আইনের মধ্যে কাজ করতে হবে। 


 তবে সে সময়ে ফরাসি বিপ্লবের কারণে এই সংস্কার কাজগুলোর গতি স্তিমিত হয়ে যায়।  


Northcote-Trevelyan রিপোর্ট (১৮৫৩-৫৪) অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব প্রদান করে।  রাজার পক্ষে মনোনয়নের  পরিবর্তে উন্মুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ও পদোন্নতির প্রস্তাব করা হয়।  ক্রিমিয়া যুদ্ধে পরাজয় এবং ভারতে সিপাহী বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এ প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সাথে কার্যকর করা হয়। প্রথমে  ইম্পেরিয়াল/ ইন্ডিয়ান [১৯১৯ সাল থেকে ইন্ডিয়ান] সিভিল সার্ভিস (আইসিএস)  গঠন করা হয়।  পরবর্তীতে স্বদেশে এ ধরনের একটি সার্ভিস গঠন করা হয়।  


গ্ল্যাডস্টোন অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থায় (১৮৫৯-৬৬), সিভিল সার্ভিসের আয়-ব্যয় মনিটর করার জন্য অডিট  ডিপার্টমেন্ট স্থাপন করা হয়,  স্বদেশী সিভিল সার্ভিসেও মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার মাধ্যমে  নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হয়। রাজার মনোনয়ন  সীমিত করা হয়। কারখানা, জেলখানা, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, ডাকঘর সেবা ইত্যাদিতে  রাজার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা হয়।  


ওয়েবারের মতে, ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের এ পদক্ষেপগুলো গ্ল্যাডস্টোন পরবর্তী সময়ে ধীরগতিতে আগায়।  সে সময় ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস ছাড়া বাকিদের নিয়োগের পর কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো না। প্রধানত অক্সফোর্ড ক্যামব্রিজ শিক্ষিত এইসব আমলারা জেনারেলিস্ট হিসেবে কার্যকর হলেও, পরিবর্তিত বিজ্ঞান ও  প্রযুক্তি ভিত্তিক কিছু উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে খাপ খাওয়াতে সমস্যা বোধ করছিল।


এ প্রেক্ষিতে ফুলটন কমিটি রিপোর্টের  (১৯৬৬-৬৮) আলোকে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সিভিল সার্ভিস ট্রেইনিং কলেজ স্থাপন করা হয় ১৯৭০ সালে। 


ব্রিটেনে সিভিল সার্ভিসের কেন্দ্রীভূতকরণ প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ ছিল।  কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ হলেও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে তাদের পদায়ন ও বদলি করা হয়।  আন্তঃ বিভাগীয় কমিটি গুলো ক্যাবিনেট কমিটির কাছে রিপোর্ট করে। সরকারি অর্থ খরচের জন্য তৈরিকৃত প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট অত্যন্ত শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কাঠামো হিসেবে কার্যকর হয়।  বড় বড় ডিপার্টমেন্টগুলোর উপরের পোস্টগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং বিভাগের ভেতরে  বদলি কার্যকর করা হয়।


  ব্রিটেনে কেন্দ্রীয় সরকার শক্তিশালী হলেও সমন্বিত আমলাতন্ত্র তৈরিতে এখনো পর্যন্ত হিমশিম  খাচ্ছে।  



ইউএস এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ: 



রাষ্ট্র গঠনের  একদম শুরু থেকেই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃত্ব চালু করে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনার ব্যবস্থা গড়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্র। যেকোনো ধরনের রাজতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে  প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি  করা হয়। 



 সংসদ সদস্য বা সিনেটর/ হাউজ রিপ্রেজেনটেটিভদের  যেকোনো ধরনের এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা প্রয়োগকরার মত পদ, মন্ত্রিত্ব বা অন্য কোন অফিস প্রধান হওয়া বন্ধ করা হয়। আবার  সরকারি অফিসারদেরকে লেজিসলেটর হওয়া থেকে বারিত করা হয়। 



যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদাররা সরকারি অফিসের অতি বাড়াবাড়িকে সন্দেহের  দৃষ্টিতে দেখতেন,  সে প্রেক্ষিতে চেক এন্ড ব্যালেন্স করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।  প্রেসিডেন্ট সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগে মনোনয়ন দিত এবং সিনেটরগণ অনুমোদন করত।  প্রতি চার বছর পর পর যাতে সকল সরকারি কর্মকর্তা ও পলিসি মেকারদের পরিবর্তন না হয় সেজন্য ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে প্রেসিডন্ট এবং লেজিসলেটরদের পুনরায় ইলেকশন করার সুযোগ রাখা হয়। 




দ্যা ফার্স্ট টেনিওর অব অফিস এ্যাক্ট-১৮২০ এর মাধ্যমে সরকারের কর্মচারীগণকে (ফেডারেল জাজশিপ বাদে)   চার বছর পরপর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কর্তৃক  নির্বাচনের পর পুনরায়   নিয়োগ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়।  এতে স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা হলেও স্থায়ী সিভিল সার্ভিস গঠন ব্যাহত হয়। ফলে অ্যামেরিকান স্পয়েল সিস্টেম গড়ে উঠে, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জয়ের উপর তাদের চাকুরী  ভাগ্য নির্ভর করত।  তারা চাকরির বেতনের একটি অংশ পার্টি অফিসে জমা দিত এবং চাকরির বাইরে দলের জন্য কাজ করত, যাতে দল পরের ইলেকশনে জয় লাভ করে। কিন্তু পার্টি পরিবর্তন হয়ে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেই সরকারি  চাকরিতে মনোনয়নের জন্য বিরাট জটলা ও গ্যাঞ্জাম তৈরি হয়ে যেত। আগের বঞ্চিতরা ঝামেলা করা শুরু করে।  মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ব্যাহত হতে থাকে।  



এমনই এক নিয়োগবঞ্চিত হতাশ প্রার্থী ১৮৮১ সালে প্রেসিডেন্ট গারফিল্ডকে গু/লি করে হ/ত্যা করে।  এ প্রেক্ষিতে ১৮৮৩ সালের  পেন্ডেলটন এক্টের মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ চালু করা হয়। 



ওয়েবার  মনে করতেন,  যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের সামাজিক মর্যাদা কম ছিল, কারণ সেখানে দক্ষতার কদরও কম ছিল, ফলে আমলাতন্ত্রের পারফরমেন্স কমিয়ে দেয়।  তবে ধীরে ধীরে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ বাড়তে থাকে, পার্টিকে ফান্ডিং করা বন্ধ করা হয়।



  বর্তমান আইন মতে কেন্দ্রীয় সরকারের গোপনীয়, গুরুত্বপূর্ণ বা অফিসপ্রধান ধরনের ও স্কেজিউল-থ্রি ক্যাটাগরির শতকরা এক ভাগ (১%) চাকুরী প্রেসিডেন্ট কর্তৃক  সরাসরি মনোনয়ন প্রদান করা হয়। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় এজেন্সিগুলোর পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম প্রস্তাব করে অনুমোদন নেয়া হয়।  



কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায়  ৮০% থেকে ৮৫% চাকুরীতে স্থায়ী মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ব্যবস্থা চালু আছে।  বাকিগুলো মেধার ভিত্তিতে কিন্তু অস্থায়ীভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। শুধুমাত্র ১% জনবল অস্থায়ীভাবে প্রেসিডেন্টের সরাসরি মনোনয়নের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।  




 তবে বেশিরভাগ রিক্রুটমেন্ট করে রাজ্য সরকারসমূহ।  আলাদা  রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন সিস্টেমে  নিয়োগ দেয়া হয়, যেমন কিছু কিছু রাজ্যে বিচারকদেরকে নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। 




জাপানের আমলাতন্ত্র : 


১৬০৩ সাল থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত তকুগাওয়া শাসনামলে যোদ্ধা সামুরাইগণ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করত। নামমাত্র রাজা   ছিল, তার নির্বাহী ক্ষমতা ছিল সীমিত।   



পরবর্তীতে মেইজি বিপ্লব বা রেস্টোরেশনের মাধ্যমে  রাজার পুন:ক্ষমতায়ন করা হলে ১৮৬৮ সাল থেকে সামন্তদের ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করার  জন্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়।  পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগকৃত আমলাগন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত এবং প্রশাসন পরিচালনায় যথেষ্ট প্রশিক্ষিত।  




পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে সংসদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে মাধ্যমে রাজার  ক্ষমতা  বিকেন্দ্রীকরণ করা হলেও আমলাগন কেবিনেটেসহ প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে রাজার নিকট দায়বদ্ধ ছিল।  



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞের পর জাপানের আমলাতন্ত্র প্রথাগত  আমলাতন্ত্র থেকে বের হয়ে অর্থনৈতিক আমলাতন্ত্রে মনোনিবেশ করে।  ১৯৪৭ সালের ন্যাশনাল পাবলিক সার্ভিস আইনের মাধ্যমে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষা, বেতনভাতা, জনঅসন্তোষ নিরাময় প্রক্রিয়া চালু হয়।  বাজেট বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে ক্ষমতায়ন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী বা ক্যাবিনেটের ক্ষমতা খর্ব করা হয়। ডিফেন্স/ হোম মিনিস্ট্রি বিলোপ করা হয়। সাবেক আমলারা প্রচুর পরিমাণে সংসদ বা ডায়েটের মেম্বার হয়। 



  সাংসদগণের এর চেয়ে আমলারা বেশি ক্ষমতার চর্চা করার সুযোগ পেত।  



আমলারা বেশি ক্ষমতা চর্চা করার সুযোগ পাওয়ার কারণে পদোন্নতি এবং ঊর্ধ্বতন পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তুমুল প্রতিযোগিতা হতো।  এক ডিপার্টমেন্টের সাথে আরেক ডিপার্টমেন্টের ক্ষমতার সীমা ও পরিমাণ নিয়ে অনেক ঝামেলা হতো।  অবসরের পর সরকারি বেসরকারি ঊর্ধ্বতন পদ পাওয়ার ক্ষেত্রেও এ প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকতো।  



১৯৪৬ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত এই তিন দশকে জাপানের অর্থনৈতিক ৫৫গুণ বৃদ্ধি পায়। অনেকেই এর কৃতিত্ব দিতে চান জাপানের অর্থনৈতিক আমলাতন্ত্রকে।  



পরবর্তীতে ক্ষমতা কিছুটা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়, জুডিশিয়াল রিভিউ শক্তিশালী হয়, অবাধ তথ্য প্রবাহ অর্থনৈতিক আমলাতন্ত্রের শক্তির  বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।  



রাষ্ট্র পরিচালনায় ইভানসের ট্রাইপড মডেল:



উপরে চারটি দেশের প্রশাসনিক কাঠামো  বিশ্লেষণ করে বোঝা যায়  যে,  একটি দেশের  আমলাতন্ত্রের গঠন সেই দেশের আর্থ-সামাজিক ও প্রধানত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ হয় ও আমলাতান্ত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।  একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্বের ধরণ, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আমলাতন্ত্রের গতিপ্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।  



অনেক ক্ষেত্রে  পলিসি পরিবর্তনে রাজনৈতিক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেশি বাধা আসে আমলাতন্ত্র থেকে।  



আমলাতন্ত্র সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা পরিচালিত। সংসদ সদস্যগণ আবার একটি এলাকার জনগনের প্রতিনিধিত্ব হিসেবে আইন প্রণয়নের সুযোগ পায়। ফলে জনপ্রতিনিধিদের জনগণের ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে একটি সমন্বয় করার আইনগত সুযোগ আছে।



 সংসদের  জনপ্রতিনিধিগণ একটি নির্দিষ্ট স্থায়ী আমলাতন্ত্রকে নির্দিষ্ট  কাজ করার ক্ষমতা অর্পণ করে নিজেদের ভূমিকাকে সংকুচিত করে।  অনেক সময় সংসদের অস্থায়ী বৈশিষ্ট্যকে স্থায়ী আমলাগন সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে কাজের গতি ধীর করে দেয়। 

 



আমলাতন্ত্র ভালো না খারাপ?  ‘আমলাতান্ত্রিক’ শব্দটি সারা দুনিয়াতেই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হলেও আমলাতন্ত্র একটি দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। 



বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ মতে, জাপান, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, চীন ইত্যাদি ইস্ট এশিয়ান অর্থনৈতিক  মিরাকলগুলো সফল হয়েছে শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের উপস্থিতির কারণে।   এক্ষেত্রে প্রথম ধাপ ছিল যোগ্য ও তুলনামূলক সৎ ব্যক্তিদের আমলাতন্ত্রে নিয়োগ দিয়ে দৈনন্দিন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখা। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য আমলাতন্ত্রকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে থেকে নিবৃত রাখার পরামর্শ দিয়েছে বহু আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থা।



 চীনে মাও সে তুং ও তার পরবর্তী  পরিকল্পনা বাস্তবায়ন  সম্ভব হয়েছে দেশটির  দীর্ঘ, প্রাচীন ও  ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা উপস্থিত থাকার কারণে। ঠিক একইভআবে  শক্তিশালী আমলাতান্ত্রিক ঐতিহ্য না থাকার কারণে নানা দেশে এ ধরণের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে। 



 আমলাতন্ত্রের বহুল সমালোচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আমলারা তাদের ঊর্ধ্বতনদের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন, জনগণের নিকট দায় অনেক কম।  এছাড়াও আমলাদের প্রদত্ত সেবার  ক্ষেত্রে বাজারে কোন  প্রতিযোগিতা থাকে না, ফলে তারা জনগণের সেবার পেছনে  খরচের ব্যাপারে কস্ট-বেনেফিট তুলনায় আগ্রহী থাকে না।  বাজে আমলাতন্ত্র অনেক সময় প্রাইভেট পার্টির খপ্পরে পড়ে কুক্ষিগত হয়ে যায়, দুষ্টচক্রের কালোহাত হিসেবে কাজ করে।   



অতিমাত্রায় আইন ভিত্তিক হতে গিয়ে আমলারা মানুষের প্রকৃত সেবার দর্শনটি হাতছাড়া করে ফেলে, ফ্লেক্সিবিলিটি হারিয়ে ফেলে।  একই কাজের জন্য নানা ধরনের অফিস থাকায় সমন্বয়ের ব্যাপক অভাব তৈরি হয়, নির্দিষ্ট ব্যক্তির দায়িত্ববোধ তৈরি হয় না।  



 সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে ২০০৩ সালে পিটার ইভানস একটি জনবান্ধব কার্যকরী আমলাতন্ত্র মডেল প্রস্তাব করেছেন। মডেলটির জন্য তিনটি কার্যকরী পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করেছেন: 


১। ওয়েবারের প্রস্তাবিত আদর্শ বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে আমলাতন্ত্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা,  

২।সেবা প্রাপ্তিতে জনগণের ও সরকারের খরচের কস্ট-বেনেফিট এনালাইসি করে বাজার মুল্যের সাথে সামঞ্জস্য রাখা, 

৩। সর্বস্তরে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রমের মধ্যে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। 



তবে অতিমাত্রায় গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ফলপ্রসু আমলাতন্ত্রকে যাতে ব্যাহত না করতে পারে সে ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংকসহ অনেক উন্নয়ন সংস্থাগুলো।  এক্ষেত্রে মডেল হিসেবে ইস্ট-এশিয়ান মিরাকলের  দেশগুলোকে মডেল হিসেবে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কতটুকু নিয়ন্ত্রণ ফলপ্রসূ হতে পারে সে ব্যাপারে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রয়োজন আছে।  


অনেক দেশে প্রাইভেট কোম্পানি, ক্রোনি ক্যাপিটালিস্ট,  প্রিডেটর অলিগার্করা রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতায় নানামাত্রায় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে।  সেক্ষেত্রে প্রকৃত মার্কেট সিগনাল বা বাজার চাহিদা পলিসিগুলোতে ও প্রদত্ত সেবায় প্রতিফলিত হওয়া দুঃসাধ্য। এ ক্ষেত্রে জনগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গণ আন্দোলন তৈরি  ও ক্ষমতার রদবদল হতে পারে, পলিসি পরিবর্তন অবিশ্যম্ভাবী  হয়।  


অনেক ক্ষেত্রে আমলাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার স্বাধীনতা (ডিসক্রিশন) বৃদ্ধি করলে আইনের অতিমাত্রায় কড়াকড়ির মধ্যেও জনগণ ভাল উপকার পেয়ে থাকে। অতিমাত্রায় ডিপার্টমেন্টালিজম না করে ওয়ান স্টপ ধরণের সেবা মানুষের উপকার করে। 




অনুন্নত দেশে আমলাতন্ত্র:


আমলাতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে হলে উন্নত দেশের কথামালাই যথেষ্ট নয়,  উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 



 গত শতাব্দীর ষাটের দশকে কাছাকাছি সময়ে স্বাধীন হয় আফ্রিকার তিন দরিদ্র দেশ মরিশাস, বতসোয়ানা ও উগান্ডা।  সময়ের পালা বদলে মরিশাস ও বতসোয়ানা একটা কার্যকর উন্নয়নের ধারার  মধ্যে থাকলেও উগান্ডা মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০২৩ সালে এসে মরিশাস, বতসোয়ানা ও উগান্ডার পার ক্যাপিটা ইনকাম যথাক্রমে প্রায় ১১৩০০, ৭৫০০, ও ১১২০ ইউএস ডলার। নানাবিধ আর্থ-সামাজিক নির্দেশকগুলো আলোচনা করে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তবে আমলাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা যায় যে, মরিশাস ও বতসোয়ানার মত উগান্ডাতে ওয়েবারিয়ান আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে গড়ে ওঠেনি।  উগান্ডা স্থায়ী আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শূন্যসার [ hollowing out] করে গণহারে বেসরকারিকরণ করে,  সরকারের আকার ছোট করে দেয়,  দৈনন্দিন কাজ বেসরকারি খাতে কনট্রাক্টে ছেড়ে দেয়। নিজস্ব বলয় ও পরিচিতদের মধ্য থেকে ক্ষমতাশীলরা বিভিন্ন পদে অস্থায়ী নিয়োগ প্রদান করে।  



আসলে এ ধরনের  ওয়েবারিয়ান আমলাতান্ত্রিক  প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দেয়া সহজ, গড়ে তোলা সময় সাপেক্ষ, কঠিন ও বিরক্তিকর প্রসেস। কিছু দুর্বলতা সত্ত্বেও, পশ্চিমাদের পরামর্শে উগান্ডার মতো এসকল প্রতিষ্ঠান  ধ্বংস না করে মরিশাস ও বতসোয়ানা মেধা ভিত্তিক নিয়োগ পদোন্নতি, প্রনোদনা  ও দীর্ঘস্থায়ী সুনিশ্চিত ক্যারিয়ার   নিশ্চিত করে।  কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্থার সাধন করে। 



 উন্নত দেশের বর্তমান আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সবার জন্য প্রযোজ্য নয় এটি তারা বুঝতে পারে। 



শুধু উগান্ডা নয়,  ওয়েবেরিয়ান আমলাতান্ত্রিক  বৈশিষ্ট্যগুলো সঠিকভাবে কার্যকর করতে না পারায় পৃথিবীর নানা অনুন্নত দেশগুলো তাদের কাঙ্খিত ফলাফল পাচ্ছে না।  মেধাভিত্তিক নিয়োগ,  পদোন্নতি এখানে প্রহেলিকার নাম।  এসব দেশে Bureaucracy becomes Bro-cracy! 



ব্রোক্র‍্যাসি বা ভাতৃত্বতন্ত্রের এই ভাতৃত্ববোধ গড়ে উঠে নানাধরণের পারিবারিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার আড়ালে। এই ব্রো-দের কাজ হলো ওয়েবারিয়ান বুরোক্র‍্যাসির মধ্যে থেকে প্রতিষ্ঠান ও আইনের উর্ধ্বে উঠে নিজেদের আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠা করা। মানুষ বুঝতে পারেনা এ প্রতিষ্ঠান আসলে কে চালায়? হায়ারার্কি কাগজে কলমে থাকে। ওয়েবারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। 



এই ভ্রাতৃত্বতন্ত্রের শক্তি আসে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কালোছায়ার নিচ থেকে। সরকার ও দুর্নীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়,  উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে,  জনগণ বঞ্চিত হয়।



  এ ধরণের দেশগুলোতে নির্বাহী বিভাগের আমলা ও বিচার বিভাগের আমলাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পৃথক করার মৃদু আলোচনা থাকলেও, লেজিসলেটিভ বিভাগের জনপ্রতিনিধিগণের নির্বাহী বিভাগের স্থায়ী আমলাদের কাজে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে অতিআগ্রহ দেখা দেয়। এ ব্যাপারে আলোচনা বা সংশোধন প্রক্রিয়া অনুপস্থিত দেখা যায়। ইভানসের প্রস্তাবিত ট্রাইপড মডেলের তিন পা ল্যাংডা-খোড়া ও ছোট বড় হয়ে যায়। সরকারযন্ত্র  ও প্রশাসন ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। 



যাইহোক, আমলাতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ হিসেবে  না ধরে একটি গতিশীল ধারা হিসেবে কার্যকর করা অধিকতর জরুরী। চলমান আমলাতন্ত্রকে সদা সতর্ক পর্যবেক্ষণ, দুর্বলতাগুলোকে অনবরত ভারসাম্য অনয়ন ও সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ সাধন হয়। ম্যাক্স ওয়েবারের প্রস্তাবিত আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিটার ইভানসের তিন পায়ের উপর শক্তিশালীভাবে দাড় করানোর মধ্যেই আধুনিক রাষ্ট্রের কল্যান নিহিত।













মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক পঠিত

চেপে রাখা অর্থণীতি: মুক্তবাজারের মিথ্যাবাজার

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?

ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রচিন্তা: আলথুসেরের রাষ্ট্রপাঠ