খুঁজে বের করুন আপনার “ইকিগাই”
“মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই”
অমরত্বের এ হাহাকার মানুষের আজন্মকালের। অমরত্ব সম্ভব হয়নি, কিন্তু মানুষ দিনে দিনে জেনেছে কিভাবে দীর্ঘায়ু লাভ করা যায়, সুস্থ ও সুখী জীবনযাপন করা যায়।
দীর্ঘায়ু অর্জন কোন জাদুমন্ত্র নয়, বরং প্রচলিত কিছু অভ্যাস অর্জন ও বদভ্যাস বর্জন এনে দিতে পারে রোগহীন দীর্ঘায়ু।
সারাদুনিয়ায় বড় উন্নতদেশগুলোর মধ্যে জাপানীদের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশী । সারাজাপানের মধ্যে অকিনাওয়া দ্বীপের গড় আয়ু আরেকটু বেশি। জাপান ও দ্বীপের মানুষের জীবনধারনের পদ্ধতি পর্যালোচনা করে দশটি উল্লেখ্যযোগ্য করনীয় খুঁজে পাওয়া গেছে।
অবসরে যাওয়া যাবে না। আমাদের দেশে যেমন আছে , সরকারী চাকুরি হতে ৫৯ বছরে অবসরে যেতে হবে। এ ধরণের ধারণা জাপানি কালচারে নেই। বাচতে হলে কোন উদ্দেশ্য ও করনীয় নিয়ে বাঁচতে হবে। নিজের মত করে ব্যস্ত থাকতে হবে।শেষদিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে হবে। শরীর ও মনকে ব্যস্ত রাখতে হবে।
ধীরে চলুন। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। সময়ের সাথে কঠিন প্রতিযোগীতা এড়িয়ে চলুন। আপনার জীবন সুন্দর হবে। পেট ভরে খাবেন না। পেটের ২০% খালি রাখুন। আগামী বছরের মধ্যে শরীরের শেইপ ঠিক করে ফেলুন, বাড়তি মেদ ঝেড়ে ফেলুন।
প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটাতে হবে। সারাদিনের কাজ শেষে প্রিয় মানুষদের সাথে আড্ডা খোশগল্প সকল ক্লান্তি দূর করে দেয়। একাকীত্ব বর্জনীয়। শারিরীক পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য জিমে গিয়ে সিক্স প্যাক জরুরি না, কিংবা টানা বড় কোন টিম স্পোর্টসে অংশগ্রহণ করা জরুরি নয়। শারিরীকভাবে একটিভ থাকলেই হলো। হাটা, বাগানকরা , সাইকেল চালানো , সাতার ইত্যাদির মত কিছু একটা করে নিয়মিত শরীরকে চাঙ্গা রাখতে হবে।
আপনার হাসি ও হাসিমুখ শুধু সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি এনে দেবে অনেক বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী। আমরা হাসিখুশি থাকব আমাদের যা আছে তা নিয়ে। সবসময় হয়ত সবার এক যায় না। তবুও হাসিমুখে তাকিয়ে দেখা উচিত মহাবিশ্বের কত সুযোগ সুবিধা সম্ভাবনা নিয়ে আমরা বেঁচে আছি। শহুরে ব্যস্ত কোলাহল এড়িয়ে প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে হবে। প্রকৃতির সান্নিধ্য আমাদের রিচার্জড হতে সাহায্য করে।
বেঁচে থাকাই একপ্রকার মহাসৌভাগ্যের । এ সৌভাগ্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত সৃষ্টিকর্তার নিকট, প্রকৃতির নিকট। ধন্যবাদ জানাব পূর্বপুরুষের নিকট, আত্বীয়স্বজন ,প্রিয়জন, প্রতিবেশি কিংবা জীবন চলার চলার নানা বাকে আমরা যাদের সাথে জড়িয়ে যাই বা সাহায্য নেই তাদেরকে। গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমাদের ভেতর থেকে সুখী করে।
লিভিং ইন দ্যা মোমেন্ট । অতীত অপরিবর্তনীয়, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এখন যে সময় টাকেই সর্বোচ্চ অনুভব করি, উপভোগ করি , দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলি। আমাদের জীবনধারণ অনেক সুন্দর হবে।
“ইকিগাই” খুঁজে বের করুন। যে সবচেয়ে আনন্দের সাথে করেন , মজা পান, কাজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন সেটি আপনার ইকিগাই। যদি খুজে পান আপনি সৌভাগ্যবান। এখনো না পেলে সময় নিন, নিজেকে জানুন, একান্তে নিজে নিজেকে প্রশ্ন করুন এবং আপনার ইকিগাইকে খুঁজে বের করুন।
এ দশটি বিষয় আপনার গাইড। এর বাইরেও খুটিনাটি জানার আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সুখী জীবন লাভ করেছে তাদের পরামর্শ বিশেষভাবে উপকারী। আমাদের সকলের সুখী, নিরোগ দীর্ঘজীবনের আকাঙ্খা রয়েছে। সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতির মাধ্যমেই এটি অর্জন সম্ভব।
Ref. book: Ikigai, writer: Hector Garcia and Fransesce Mirrales
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন