ব্যাঙ খান বা বিড়াল মারুন
এর কাছাকাছি ভাবানুবাদ হতে পারে ‘বিড়াল মারা’। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে নানা পর্যায়ে নানা ধরণের অসংখ্য বিড়াল আসে, উৎপাত করে, কর্মস্পৃহাকে থামিয়ে রাখে। ক্যারিয়ার ও জীবনে সফল হওয়ার জন্য যথাসময়ে সঠিক বিড়ালটি মারা উচিত, অথবা বিড়ালটিকে তাড়িয়ে দেয়া উচিৎ।
‘ইট দ্যাট ফ্রগ’, ব্যাঙ খাওয়া বা বিড়াল মারা খুব গুরুত্বপূর্ণ । যা আমাদের নতুন কিছু শুরু করতে, লক্ষ্য পূরণ করতে , আমাদের ক্যারিয়ারে, ব্যাক্তি জীবনে সফল হওয়ার পথে মানসিকভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাই হচ্ছে ‘ব্যাঙ’ বা ‘বিড়াল’। এ বাধাগুলোকে দূর করার জন্য কিছু পরীক্ষিত পদ্ধতি বা কর্মপন্থা অনুসরণ করলে সফল হওয়া যায়।
কারো জন্য এ বাধা শুধু আলসেমি বা দীর্ঘসুত্রিতা। কারো জন্য শুরু করার সাহসের অভাব, কোনটা আগে কোনটা পরে শুরু করব এ নিয়ে সিদ্ধান্থীনতা বা অসফল হওয়ার নানা ধরণের অহেতুক ভয়। তবে সঠিক পদ্ধতিতে সামনের দিকে আগালে এ সকল সমস্যা খুব বেশি বড় বাধা হয়ে দাড়াতে পারে না।
ইতালিয়ান অর্থনীতিবিদ ভিলফ্রেডো প্যারেটো তত্বটি দাড় করিয়েছিলেন অর্থণীতির শ্রেণীবিভেদ ব্যাখ্যা করার জন্য । তিনি বলেছিলেন ২০% শোসক শ্রেণী ৮০% আমজনতার উপর অর্থণৈতিক ও ক্ষমতার কতৃত্ব দেখায়। এখানে %টি অনেকটা রুপক অর্থে । এটা কম-বেশি হতে পারে। আশ্চর্যজনকভাবে, এই ৮০%-২০% রুলটি লাইফ ম্যানেজমেন্টে বেশি প্রযোজ্য। সকল কাজের গুরুত্বপূর্ণ ২০% আপনার সফলতার ৮০% এনে দেবে। বাকি ৮০% কাজ কম মুল্যবান, এগুলো আপনাকে বড়জোর ২০% সফলতা এনে দেবে। এমন হতে পারে সব কাজে সমান সময় লাগছে, কিন্তু সকল কাজকে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার দরকার নেই। যে ২০% কাজ আপনার চাকুরি, ব্যবসা বা জীবনের উন্নতির জন্য বেশী দরকারী সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে করলে আপনার সফলতা নিশ্চিত। অসফল মানুষের গুরত্ব অনুযায়ী কখন কি করা দরকার সেটা বুঝতে পারে না, কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে অধিক শ্রম মেধা ব্যয় করে অল্প লাভবান হয়।
গুরুত্বানুযায়ী মনোযোগ দিয়ে কাজ করার জন্য এরকম আরেকটি পদ্ধতি হলো এবিসিডিই (ABCDE) মেথড। A হচ্ছে সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো যেগুলো অবশই করা উচিৎ, না করলে বিপদ হবে। একাধিক এরকম কাজ হাতে থাকলে হবে A1,A2, A3 ইত্যাদি। এগুলো শেষ না করে কখনোই B শ্রেণীর কাজে যাওয়া উচিৎ নয়। B হচ্ছে সেই কাজগুলো যেগুলো করা উচিৎ কিন্তু না করলে অল্প সমস্যা হবে। C হচ্ছে সেই কাজ যা করা ভালো না করলে সমস্যা নাই। যে কাজ অন্যকে দিয়ে করানোর আর্থিক বা সাংগঠনিক সামর্থ আছে , সেগুলোতে কখনোই নিজে অযথাই সময় ব্যয় করা উচিৎ না, এগুলো D (Delegation) শ্রেণির কাজ। আবার কিছু কাজ আমরা অভ্যাসবশত করি, বিশেষ ফায়দা নেই , এগুলো E (elimination) শ্রেণিতে রাখা যেতে পারে। সময়ের কাজ সময়ে করার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে এটা।
ব্যাঙ যদি খেতে হয় , কোন ব্যাঙটি আগে খাওয়া উচিৎ?- যে ব্যাঙটি সবচেয়ে কুৎসিত, ভয়ংকর বা অরুচিকর। অর্থাৎ, একাধিক একই লেভেলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে সবচেয় কঠিন ও চ্যালেঞ্জিংটাই আগে শুরু ও শেষ করা উচিৎ। কাজের আগে আমাদের প্রয়োজন সঠিক পরিবেশ তৈরি। কাজের সময় যাতে প্রয়োজনীয় কোনকিছুর জন্য ছুটোছুটি করতে না হয়। প্রতিদিনের কাজের পরিকল্পনা ঐ দিনের আগে বা সকালে দিনের শুরুতেই করে ফেলা উচিত। বাধাগুলো কি আসতে পারে সেটার একটা তালিকা থাকা উচিৎ। সবকাজ একসাথে শুরু না করে একটা একটা করে আগালে সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যাবে। আধুনিক যুগে মাল্টি-টাস্কিং শব্দগুলো আবেদনময়ী হলেও ফলাফল দেয় কম। নিজের কাজের ডেডলাইন বা টার্গেট নিজে সেট করে কাজ করা উচিত।
এগুলো এক একটি অভ্যাস। এ ধরণের অভ্যাসগুলো বহুদিন চর্চা করলে আমাদের নিউরনের মেমরিতে জমা হয়ে যায়, এগুলো পরে কষ্ট করে মাথা খাটিয়ে তালিকা করে সুত্রে ফেলতে হয় না, আপনাআপনি চলে আসে। অর্থাৎ আপনার চর্চিত ভাল অভ্যাসগুলোই আপনার সফলতা, বদভ্যাসগুলোই আপনার ব্যার্থতার সিড়ি। সঠিকসময়ে সঠিকভাবে বিড়াল মারা বা ব্যাঙ খাওয়ার বহুল চর্চিত অভ্যাস আপনাকে সফলতা এনে দেবে।
রেফারেন্স বই: ইট দ্যাট ফ্রগ
লেখক ব্রায়ান ট্রেসি
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন