প্র‍্যাক্টিক্যাল লিডারশিপ ১০১: মিড-টার্ম পর্যন্ত

দীর্ঘদিন মাঠ প্রশাসনে কাজ করার সুবাদে বেশ কিছু লিডারশিপ হ্যাকস খুঁজে পেয়েছি। নানা বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে বইপত্র, আইনকানুন, বিধিবিধানের পাশাপাশি  এই হ্যাকসগুলো বেশ কার্যকর। যদিও এই বিষয়গুলো পাবলিক সার্ভিস লিডারশিপ সম্পর্কিত,  তারপরেও প্রাইভেট সার্ভিসেও বেশ কাজে লাগতে পারে। বুশ স্কুল, টেক্সাস এ এন্ড এম ইউনিভার্সিটিতে এনার্জি এন্ড টেকনোলজি পলিসিতে মাস্টার্স করার পাশাপাশি নিজ আগ্রহে বছরব্যাপী লিডারশিপ ডিপ্লোমা কোর্স  করেছিলাম। এর আগে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন ডিগ্রিতেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় পড়েছিলাম। পুথিগত  তত্বের  সাথে ১২ বছরের পাবলিক সার্ভিস অভিজ্ঞতা মিলিয়ে বেশকিছু বিষয়ের  তালিকা দিলাম। এর বাইরে আপনাদের জানামতে আরো কিছু এড করার থাকলে কমেন্টে জানাবেন। বেশি পরিচিত ও চর্চিত বিষয়গুলো সংগত কারণে বাদ দিলাম।


১. মেজাজ হারাবেন না: 


চাকরি জীবনে যে কয়বার বিব্রত বা অপমানিত হয়েছি, এগুলো কোনোটাই শত্রুতা বা অদক্ষতার কারণে না। শুধুমাত্র,  কোন কারণে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ  হারিয়েছিলাম, বাজে ফলাফল পেয়েছি। সুতরাং এক সেকেন্ডে, এক মিনিট, এক ঘন্টা বা একদিনের জন্যেও মেজাজ হারাবেন না। দ্যা মোমেন্ট ইউ লুজ ইউর টেম্পার- ইউ লুজ নাথিং লেস দ্যান এভ্রিথিং। যদি কাউকে হার্ড টক দিতেও হয়, প্রিপ্ল্যান করে প্রস্তুত হয়ে দেবেন।


 মুহূর্তের উত্তেজনা পতনের কারণ। হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে গেলে যেভাবেই হোক নিয়ন্ত্রণ  করুন। স্থান ত্যাগ করুন, জোরে নিশ্বাস নিন,  পানি খান, ওয়াশরুমে যান, যা কাজে লাগে তাই করুন। কিন্তু ঝিম মেরে যাবেন।


 কেউ কেউ অন্য লোকের ধাতানি খেয়ে ঝিম মেরে পড়ে থাকে,  কিন্তু পরে অধস্তনদের  উপর চ্যনেলিং করে। এটাও বাজে পদ্ধতি। এভরিওয়ান উইল পানিশ ইউ ফর ইউর ব্যাড ম্যানার এন্ড ইল টেম্পার টুডে ওর টুমরো। খালি সুযোগ পাইলে হইল। হাজার ভাল কাজ দিয়েও ইল টেম্পারামেন্টের অভিশাপ নাও কাটাতে পারেন। পুরানকালে এসব করেও কেউ কেউ টপ লিডারশিপ পজিশনে যেত, এখনো হয়ত যায়। সামনের দিনে এই সম্ভাবনা শুন্য হয়ে যাবে।  


পাব্লিক সার্ভিস লিডারশিপে যারা কাজ করবেন,  আপনার নিজের কোন দোষ ছাড়াই গোষ্ঠীশুদ্ধো গালি খাবেন। এতে তেতে উঠার কিছু নাই। একদম নিরবে হজম করা শিখে ফেলবেন। আসলে মানুষের পাবলিক সার্ভিসের উপর অনেক আশা থাকে। দেশের পাবলিক সার্ভিস- স্ট্যাডার্ড থেকে এখনো অনেক দূরে আছে। আপনি হয়তো নিজে খুব কাজ করেন,  কিন্তু অভারঅল এক্সপেকটেশন পূরণ করতে আরো বহূদূর যেতে হবে। সবাই মিলে ধৈর্য ধরে কাজ করলে সবকিছুই আস্তে আস্তে ইনক্রিমেন্টালি ভাল হবে। সুতরাং অল্প উস্কানিতে ফ্রেঞ্চফ্রাই হয়ে যাবেন না। লিস্টের পরের বিষয়গুলো যদি মাথায় নাও থাকে, সমস্যা নাই। এ অংশ  ভুলে যাবেন না। এটাই আমার দৃষ্টিতে  টপ ওয়ান লিডারশিপ টিপস। 


২. সিনিয়ির লিডারদের সম্মান করুন:


বসের খুঁত খুঁজে  বের করে এটা নিয়ে হাহুতাশ করা খুব বাজে প্র‍্যাকটিস। তারা ঘাস খেয়ে বস হন নাই, তাদের যোগ্যতা ছিল বলেই হয়েছেন। ক্রিমিনাল বস ইজ দ্যা অনলি ব্যাড বস। এর বাইরে সবার ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী নানা গুণের  কারণে আপনার বসের পদে গেছেন। কেউ হয়তো আপনার মত অতিসাহসী না, কিন্তু দেখবেন তারা সবাইকে নিয়ে সুন্দর ভাবে কাজ শেষ করেন। কেউ হয়ত দ্রুত সিদ্ধান্ত দেন না, কিন্তু ভেবে চিন্তে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্তই দেন। মোদ্দাকথা, তাদের ভাল গুণগুলো খেয়াল করুন,  সেগুলোকে শ্রদ্ধা করুন, নিজে চর্চা করুন; তার আন্ডারে কাজ করতে ভাল লাগবে। 


কাজ করে শান্তি পেতে হলে বসের প্রতি শ্রদ্ধা আনা জরুরি। যদি আপনার সিনিয়র লিডার  বুঝতে পারেন,আপনি তাকে সিনসিয়ারলি ফলো ও ওবে করছেন, তাহলে তারা নিজেরাই তাদের স্কিল সেটস ওপেন করে দেবেন। দেয়ারফোর, এবজর্ব দেয়ার পার্সোনা এন্ড ইমার্জ ইউরসেল্ফ ইন দেয়ার ভাইব। দিনশেষে লিডারশিপ সাংঘাতিক গুরুমুখী বিদ্যা। বই পড়ে,  নিজে ট্রায়াল এরর সিস্টেমে শিখতে অনেক সময় লাগে, অনেক এফর্ট দিতে হয়। কিন্তু ভালো সিনিয়র লিডারদের সরাসরি কপি করে নিজের মত করে এডাপ্ট করে ফেলতে পারেন। আস্তে আস্তে নিজের একটা স্টাইল দাঁড়িয়ে যাবে। 


আবার বয়সের পার্থক্যের কারণে ও নতুন জেনারেশনে বড় হওয়ার কারণে হয়ত নতুন কিছু ডিগ্রি, টেকনোলজি,  জার্গন আমাদের আয়ত্বে থাকে, সিনিয়র লিডারদের থাকে না। তখন মনে মনে তাদের ব্যাকডেটেড ভাবি। এটা খুব বড় একটা ফ্যালাসি। এসব স্কিল আপনার জেনারেশনের অনেকেই জানে, এসব টাকা দিয়েও কেনা যায়, ম্যানেজ করা যায়। আপনার বেশি জানা ভাব খুব বিরক্তিকর। এটা বুঝতে পারলে সিনিয়র লিডার আপনাকে লাথি দিয়ে তার গুডবুক থেকে বের করে দেবেন। 


একজন ভাল মেন্টর লিডার পাওয়া সাত জনমের ভাগ্য। প্লিজ টেইক হিম/হার ভেরি সিরিয়াসলি। তাঁকে গুরু/পীর মনে করুন। সাবমিট স্ট্রেইট ইফ ইউ মেইক এনি মিসটেক। আলগা আর্গুমেন্ট দেবেন না। তারা এসব হেইট করে। সর্বদাই  তাদেরকে জানান কি পরিমান শিখছেন ও লাভবান হচ্ছেন। এগুলো তেলবাজি না। এগুলো গুরুভক্তি। 

একজন টপ স্কেল্ড লিডারের আশির্বাদ আপনার উপর থাকলে সর্বদাই আপনি নিরাপদ বোধ করবেন। তাদের স্নেহধন্য হওয়া ও আশীর্বাদ পাওয়াটাই আপনার ইমেজ বৃদ্ধি করবে। মানুষ আপনাকে সম্মান করবে, কারণ আপনি একজন ভাল লিডাররের পাশাপাশি ভাল একজন শিষ্যও বটে। 


আরেকটি বিষয়, সিনিয়ির লিডারদের সাথে আলগা পীরিত না করাই ভালো। এসব  আলগা পীরিত কোন কাজের না।  তিনি আপনাকে কোন কারনে ভালোবাসেন, এটা গ্র‍্যান্টেড মনে করবেন না। এনিটাইম সুন ইউ মেইক আ গ্রিভিয়াস মিস্টেক, দে উইল কিক ইউ আউট মার্সিলেসলি। তারা যতটুকু একসেস দেন তার চেয়ে কম নেবেন। তিনি আপনার কাজ ও সিনসেয়ারিটি গুরুত্ব দেন, এ গুরুত্ব ধরে রাখুন। আপনার এ চেষ্ঠাটাই  দিন শেষে আপনাকে তার কাছে প্রাসঙ্গিক রাখবে। ভালোবাসা এফেমেরাল, আজকে আছে কালকে নাই। কিন্তু আপনার সিনসেয়ার হার্ড ওয়ার্ক, লয়ালটি তার জন্য উপাদেয় খাদ্য। এই খাবার  টাটকা রাখুন। দুইদিন আগে কিভাবে ইম্প্রেসড করছেন, ভুলে যান। আজকের কাজটা আজকে ভালভাবে শেষ করে তাকে পুনরায় ইম্প্রেসড করুন। সিনিয়র লিডারদের ক্লোজ এলাইদের তাদের মতো করেই সম্মান করুন।  এরাও সব সময় আপনার জন্য বড় একটি ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর। 


৩. ম্যানেজমেন্ট অন দ্যা স্পট: 


আপনার প্রতিনিধি পাঠালেন, অন্যদের দিয়ে কঠোর নজরদারী করালেন,  তারপরেও কাজের জায়গাগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। আপনার সাবোর্ডিনেটরা হয়ত সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করেছেন, সব খুটিয়ে দেখে আপনাকে রিপোর্ট করেছেন,  কিন্তু তারপরেও যখন নিজে স্পটে যাবেন আপনার লিডারশিপ পজিশনাল সেন্স দিয়ে অনেক গ্যাপ খুঁজে পাবেন। জাস্ট সেখানে আশেপাশের লোকজনের সাথে কথা বললে,  নিজ চোখে দেখলে মোটামুটি নির্ভুল কাজ পাবেন। আর আপনি কাজের জায়গায় যান বা যেকোন মুহূর্তে যেতে পারেন এটা সংশ্লিষ্টদের জন্য ভাল মেসজ। তারা অলোয়েজ অনগার্ড থাকবে। লিডার হিসেবে  সেরিমোনিয়াল প্রেজেন্সটাও অন্যদেরকে অনুপ্রাণিত করবে। 


৪. লিডার তৈরি করা:


যে কাজ সাবোর্ডিনেট করতে পারবে, মরে গেলেও সে কাজ নিজে করতে যাবেন না। মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট খুব বাজে লিডারশিপ ট্রেইটস। তাদেরকে ভুল করতে দেন, যথেষ্ট পরিমান দায়িত্ব নিতে শিখান,  তারা আপনার কাজগুলোকে আস্তে আস্তে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসেসে আনবে। যদি আপনি সত্যিকারের লিডার হতে  থাকেন,  আপনার কাজ হচ্ছে- নিজে  কাজ না করা: কিন্তু যারা কাজ করে বা করায় তাদের সুপারভাইজ বা গাইড করা।  


এমপেথির চর্চা করুন।  অফিসে গাইড করার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনেও তাদের ভালমন্দ আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিকভাবে ভালো রাখার চেষ্ঠা  করুন। অধীনস্তদের কখনোই আপনার সিনিয়র লিডার বা স্টেকহোল্ডারদের তোপের মুখে ঠেলে দেবেন না। তাদের ক্রিমিনাল মিস্টেক বাদে অন্য সব মিস্টেক নিজের মিস্টেক হিসবে ট্রিট করে তাদের প্রটেকট করুন। ফিডব্যাক পাবেন। 


সর্বদাই ভুল ধরার জন্য ওত পেতে থাকবেন না। হালকা অনিচ্ছাকৃত ভুল ইগ্নোর করতে পারেন। বরং ভালো কিছু করলে পাবলিকলি প্রশংসা করুন। কি করতে হবে সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিন, নিজে দ্রুত ডিসিশন দেয়া প্র‍্যাক্টিস করুন, আস্তে আস্তে আয়ত্বে এসে যাবে। আপনাকে দেখে সাবোর্ডিনেটরাও তাল মিলাবে,   ভাল আউটপুট দেবে। 


সাবোর্ডিনেট বা জুনিয়র মানেই আপনার চাকরবাকর না। এদের অনেকেই আপনার চেয়ে মেধাবী,  দক্ষ, গুণী। এটা মেনে নিন, এপ্রেশিয়েট করুন, সুযোগ দিন,  তাদের নেতা হিসেবে তৈরি করুন। অল্পতেই হৈচৈ বকাঝকা করে এদের বিরক্ত করবেন না। এসব খুব বাজে লিডারশিপ ট্রেইটস, উইক ক্যারেক্টার সাইন।  একজন ভালো লিডার আরো ভালো লিডার তৈরির ফ্যাক্টরি। বি দ্যাট ফ্যাক্টরি। আপনার তৈরি একজন ভালো  জুনিয়র লিডার আপনার একজন ব্র‍্যান্ড এম্বেসেডর। তারা সর্বদাই আপনার লিডারশিপ কোয়ালিটিকে গ্লোরিফাই করবে। দে আর ইউর ট্রু লিগ্যাসি। 


৫. রাইজ অন দ্যা অকেশন:


চাকরি বাকরি যেহেতু করছেন সময়ের  নানা বাঁকে কিছু ক্রাইসিস তৈরি হবে,  আবার গুরুত্বপূর্ণ  কিছু সুযোগ  তৈরি হবে।  সিজ দা মোমেন্ট।  শতভাগ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন,  অধীনস্থদের ভালো করে কমান্ড করুন।  বি অন গার্ড,  কিপ দেম অনগার্ড। কিপ ইয়োরসেল্ফ হায়েস্ট এলার্ট। কাজটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জোঁকের মত লেগে থাকুন। শেষ হলে তৃপ্তির হাসি হাসবেন না। প্রশংসা পেয়ে গার্ড লুজ করবেন না। নাথিং ইজ গ্র‍্যান্টেড।সময় করে বসে  ঠান্ডা  মাথায়   নিজেকে হার্শলি ক্রিটিসাইজ করুন্। আরো কিভাবে কি করলে বিষয়টি আরো সুন্দরভাবে হতে পারত পুনরায় ভাবুন। এসব করলেই কর্তৃপক্ষ ডেকে এনে পুরষ্কৃত করবে এমন না। এম্লন হতে পারে কেউ খেয়ালই করবে না। তবে বার বার এভাবে আগালে আপনার একটা স্ট্রং ক্যারেক্টার গ্রো করবে। পিপল আর ডাইং দেয়ার টু রেস্পকেট আ পারসন উইথ ট্রু ক্যারেকটার এন্ড কন্সিস্টেন্ট মেটল। 


৬. অতিবাড় বাড়বেন না:


আমরা কেউ নবাব আলীবর্দী খার নাতি নবাব সিরাজউদ্দৌলা না।  এত কিছু হলে আর যাই হোক চাকরি বাকরি করে খেতে হতো না।  যেহেতু চাকরি করে খাই, সিস্টেমের কারণে আমরা একটা সময় গিয়ে পজিশনাল লিডারশিপ লাভ করি।  আশেপাশের স্টেক হোল্ডাররা, অধীনস্থ বা সহকর্মীরা কেউ আমাদের তুলনায় তুচ্ছ বা ক্ষুদ্র না। সবার একটি গল্প আছে, সবার একটি বেড়ে ওঠার আলাদা কারণ আছে,  তাই হয়তো তারা আমাদের মতো না।  এদের কেউ কেউ আমাদের চেয়ে অনেক মেধাবী, অনেক বিচক্ষণ এবং নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ।  আপনার সফলতা তাদের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না।  


সুতরাং, আপনার সকল স্টেক হোল্ডারদের যথাযথ শ্রদ্ধা করুন, তাদের প্রাপ্য ক্রেডিট প্রদান করুন। নিজে সব ক্রেডিট নিতে গেলে অন্যরা সবাই মিলে আপনাকে পানিশমেন্ট দেবে। আপনার লাইফ হেল হয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি কোন ক্রেডিট নিবেন না। সিনিয়র লিডার বা স্টেকহোল্ডারদের  দিয়ে দিবেন। লিডারশিপ  টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না। লম্বা সময় কনসিসটেন্ট লিডারশিপ প্র‍্যাকটিস আপনাকে স্বমহিমায় আলাদা করবে।  


 ভুলেও কাউকে তুচ্ছ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না, নিজেকে এক নম্বর ভাববেন না, সবচেয়ে বড় জ্যাঠামশাই মনে করবেন না।  ভদ্রতাবোধ,  ঔচিত্যবোধ, মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করা, স্বল্পভাষী থাকা,  সদালাপী হওয়া, অযথাই বিরক্ত না করা, যথাযথ আপ্যায়ন ইত্যাদি হচ্ছে চার্মিং ক্যারেকটার ট্রেইটস। এগুলো মানুষকে আপনার প্রতি ম্যাগনেটের মত আকর্ষণ করবে। চাকরির বাইরে এই মানুষগুলো সারা জীবন আপনার বন্ধু বা শুভাকাঙ্ক্ষী  হয়ে থাকবে। 


৭. ডাই ফর কিপিং ইউর ইমেজ হাই: 


আমরা আসলে অন্যদের চোখে আমাদের ইমেজ। এটা অর্জন করা কঠিন,  ধরে রাখা আরো কঠিন।  এ জায়গায় ছাড় দেবেন না। আমাদের শিক্ষানবিশ কাল চাকরির এক দুই বছর না, মোটামুটি প্রথম সাত আট বছর। এ সময়ে একটা চাকরির অফিস এমবিয়েন্স, কালচারাল ইনসাইডস, সফল টপ লিডারদের, বেটার পার্ফরমারদের ও  ব্যার্থদের স্টাডি করা হয়ে যাবে। ডাইনমিকসটা একদম চোখ বিধিয়ে খেয়াল করবেন।  এই সময়ে সস্তা প্রশংসা,  জনপ্রিয়তা, ক্ষমতা,  অর্থের হাতছানি উপেক্ষা না করলে,   খুব বাজে ইমেজ তৈরি করে । ফোকাস নস্ট করে, আসল কাজের দক্ষতা তৈরি করে না। বড়ব্যাপার হলো, এই সময়ে তৈরি ইমেজ দিয়ে পরবর্তী সময়ে চাকরির ভেতরে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী,  এলাই, বন্ধুবান্ধব তৈরি হবে।


 একটা খাসা উদাহরণ দেই, এই সময়ে আপনি অর্থের লোভে পড়ে মোটামুটি দক্ষ চোর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, পরবর্তী সময়ে অলমোস্ট পুরো ক্যারিয়ারেই আপনার মতই আরো কয়েকটা চোর  আশেপাশে ঘুরঘুর করবে। অন্য ট্রেইটস এর লোকজন আপনাকে খুব বেশি হেল্পও করবে না, ইনসাইড একসেস বা সাপোর্ট দেবেনা। বাধ্য হয়ে  চোরে চোরে মাসতুতো ভাই থেকে আস্তে আস্তে আপন ভাই হয়ে যাবেন। লোকজন সামনে ভয় বা সুবিধা পাওয়ার লোভে প্রশংসা করবে, কিন্তু আড়ালে গেলেই হাসাহাসি করবে। ভালো ইমেজ থাকলে চোরগুলাও আপনাকে সম্মান করবে। প্লিজ বি কেয়ারফুল হাউ ইউ বিল্ড ইউর ইমেজ।  ইটস মোর প্রেশাস দ্যান এনিথিং এরাউন্ড ইউ। 


৮. নেভার কম্প্রোমাইজ উইথ দ্যা প্রিডেটরস: 


মাঝে মধ্যেই দেখবেন কোন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক বা সংগত কোন পরিচয় ছাড়াই কোথাও কোথাও দু-এক ব্যক্তি উড়ে এসে জুড়ে বসে প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের উপর খবরদারি করছে। এদের প্রধানত এন্ট্রি হয় পূর্ববর্তী লিডারদের দুর্বলতা, মিস-ম্যানেজমেন্টের জন্য। এরা এমনভাবে জেঁকে বসে, শোষন করে, আতংকে রাখে এবং ফুলেফেপে বড় হয়ে যায়,  পরে এদের দূর করাই বিপদজনক হয়ে যায়। এরা বিষফোঁড়া।  এদের সাথে হাত মিলিয়ে চললে আপনি ভালো থাকতে পারেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান ও আপনার সেবা প্রার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

 সত্যিকার অর্থে  নিজেকে ট্রু লিডার হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে এদেরকে বিদায় করা  বা নিউট্রালাইজ করে ফেলা আপনার নৈতিক দায়িত্ব।  আর কোনোভাবে উল্টো সহযোগিতা করলে আপনি  প্রাতিষ্ঠানিক মাফিয়াতন্ত্রের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন, মানুষ আপনাকে ঘৃণা করবে। 


 তবে এ কাজটা বেশ কঠিন,  ভীষণ ঠান্ডা মাথায় দীর্ঘপ্ল্যান করে করতে হয়। শুরুতে স্বাভাবিক সম্পর্ক  রাখলেও আস্তে আস্তে এদের থেকে দুরত্ব রাখা শুরু করবেন, পরে তার সাথে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেবেন। তারা এটা সহজভাবে নেবে না, সিরিয়াস রিএকট করে করে আপনাকে বিপদে ফেলার তালে থাকবে। এসময় আপনার গার্ড আরো শক্ত করতে হবে, বিভিন্ন চ্যনেল একটিভেট করে নেটোয়ার্ক শক্ত করতে হবে। এসব হারামিদের বড় দুর্বলতা হলো এরা এক্সেস না পেলেই ডেস্পারেট হবে, এবং ভুল করবে। সুযোগ বুঝে উস্কানি দিয়ে ডেসপারেট বানিয়ে ভুলের জালে ফেলতে পারেন। ভুল করলেই চান্স মতন ক্যাক করে ধরে ঘাট মটকায়া দিবেন। তার আরোপিত মিথগুলো ডিজলভ করে দিবেন। এসব ক্ষেত্রে রাগের মাথায় নিজের এডমিনিস্ট্রেটিভ বা লিগ্যাল পাওয়ার কোনভাবেই  ইউজ করা যাবে না। এগুলো সর্বশেষ অস্ত্র। 


চাকরিতে এটা আমার ফেবারিট পার্ট। অন্য সব মেমোরি মনে থাকে না, বাট এগুলা খুব থ্রিলিং। আমার ক্ষেত্রে এসব ঘটলে আমার নিউরন মারাত্বক একটিভেটেড  হয়ে যায় এন্ড আই এঞ্জয় দ্যা প্রসেস। অন্য কেউ এসব ঘটনা বললে চোখ বড় বড় করে শুনি, খুব ভাল লাগে। তবে ম্যাকিয়াভেলির খালাতো ভাই না হলে এসব থ্রিলে না যাওয়াই ভাল। বেশ রিস্কিও বটে। এই টিপ্সটি সবার জন্য প্রযোজ্য না। 


৯. প্রফেশনাল জেলাসি ও হরাইজন্টাল কমিউনিকেশন: 


এটি একটি বিস্তৃত বিষয়। এসব নিয়ে এর আগে অনেকগুলা লেখা লিখেছি। স্ক্রল করে দেখে নিতে পারেন। হিংসা, টক্সিসিটি, প্রফেশনাল জেলাসি হচ্ছে পার্ট অফ ক্যারিয়ার জার্নি। প্রফেশনাল জেলাসি বেশি আসে  সমপর্যায়ের লোকজন থেকে। এই হরাইজন্টাল লিডারশিপ খুব ক্রিটিক্যাল। এদের সাথে নিজ থেকেই যতটা সম্ভব সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। নিজের পরামর্শ,  সময় বা অন্য কোন রিসোর্স দিয়ে তাদের একটু আধটু হেল্প করলে একটা ভাল ফ্রেন্ডশিপ রিলেশন হবে। অনেকেই টপ লিডারের সাথে ভালো রিলেশনের সুবাদে, একটু বড়-ছোট বা সমসাময়িক  অন্যদের চাপে রাখেন, অপদস্ত করেন, পেইন দেন। আবার নিজেকে বেশি ভালো দেখাতে গিয়ে অন্যদের দৃষ্টিকটুভাবে ছোট দেখান  - এগুলা  খারাপ কাজ। সময় হলেই এরা আপনাকে ধরে সম্মিলিতভাবে ধোলাই দেবে। নাথিং গোজ আনপেইড, নট আ সিংগেল বাইট।


 সুতরাং আপনার উচিত হবে তাদের এলিভেট বা ফেসিলিটেট করা, যথাযথ সম্মান করা। এতে  সত্যিকার অর্থে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়ে যাবেন। আপনার জার্নিতে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত মুল্যবান হবে। আপনার বস-সাবোর্ডিনেট  ভার্টিক্যাল লিডারশিপের পাশাপাশি এ বিষয়টি মোটামুটি ভালো হলেই আপনার ৩৬০° লেভেলের লিডারশিপ স্কিল গড়ে উঠবে। 


যতযাই করেন, নিজে একটু ভাল করলে কোন কারণ ছাড়াই একটা জেলাস গ্রুপ পেয়ে যাবেন। এদের এডিয়ে চলবেন,  অত পাত্তা দেয়ার কিছু নাই। আপনার কাজের উপর ফোকাস,  সিনিয়র লিডারদের আস্থা এসব্ অটো নিউট্রালাইজ করবে। নিজেকে আস্তে আস্তে উপরে তুলে এদের ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যান। এদের নিয়ে বেশি পেইন খাবেন না। এদের সবচেয়ে বড় শাস্তি এরা আপনার সাফল্যে সর্বদাই হিংসার আগুনে নিজেদের  কলিজা কটকটি ভেজে খাবে। লেট দেম বাইট দেয়ার ওউন বাট্ট। 


১০. ফাতরামি ইতরামি করবেন না: 


অন্যরা খুব খারাপ,  আপনার জবের লোকজন ফেরেস্তা। অন্যরা চাকরি করে বাকিংহাম প্যালেসে,  আপনারটা হচ্ছে আফ্রিকার ডায়মন্ড মাইনের গভীরে মাটি কাটা।  প্রাইভেট ভালো না,   গভরমেন্ট জব ভাল, বিএটিতে সিগ্রেট বেচে আর আপনি ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে বিরাট সোয়াবের কাজ করছেন। এসব ইতরামি ফাতরামি বিচিং কখনোই করবেন না। আসলে অন্য সব জবে আপনার আমার ভাইবোন পরিবারের লোকই কাজ করে, এদের কেউ কোয়েকাফ থেকে আসে নাই।


 আমরা আমাদের যোগ্যতা, পরিস্থিতি, পছন্দ, ভাগ্যের কারণে একেক জন একেক কাজ করি। একটা দেশের ব্যাংকারারা মহাসৎ, কর্মঠ হবে আর পলিটিশিয়ানরা ফালতু হবে - এমনটা হওয়ার সূযোগ খুব কম। আসলে সবগুলাই অলমোস্ট প্যারালাল কোয়ালিটি। বড়জোর ১৯-২০। আর ভালো হলে আস্তে আস্তে একসাথে সবাই ভালোর দিকেই যাবে। এটাই ইনক্রিমেন্টালিজম। 


সুতরাং এসব বড়াই-অহংকার বাদ দিয়ে নিজের ফোকাস ধরে রাখুন। নিজের কাজের প্রতি,  প্রতিষ্ঠানের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে সারা জাতি কিছুনা কিছু উপকার পাবে। যদি ভালমত টপ লিডারশিপে যেতে পারেন তাহলে হয়ত কিছু ম্যাক্রো লেভেলের  সমস্যার সমাধানে হাত দেয়ার সুযোগ হতে পারে। অন্যথায়,  এসব করে সময় ও ফোকাস নষ্ট করলে নিজের কোয়ালিটি ডিমিনিশ হবে, জব স্যাটিসফেকশন জীবনেও পাবেন না। 


এ বিষয়গুলো আমি বিভিন্ন সময়ে কিছু   ফরমাল ট্রেনিং ক্লাসে ও কিছু ক্লোজ কলিগদের সাথে  ইনফরমাল আলাপচারিতায় শেয়ার  করেছিলাম।  পরবর্তীতে তাদের পক্ষ থেকে ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি।  আমি বিরাট কোন দক্ষ লিডার না, কিংবা বলার মত  কিছু করেছি এমন দাবি করছি না। এ বিষয়গুলো মূলত আমার ভুলভ্রান্তি ও অন্যদের সঠিক চর্চা দেখার   অভিজ্ঞতা,  কিছু বই-পুস্তক নাড়াচাড়া করা, নিজের ট্রায়াল এন্ড এরর থেকে নেয়া। কিছু বিষয়ে অনেকের সুস্পষ্ট দ্বিমত থাকবে, আপনারা নির্দ্বিধায় মতামত জানাবেন।  

মন্তব্যসমূহ

সর্বাধিক পঠিত

আধুনিক আমলাতন্ত্র: ওয়েবার থেকে ইভানস

চেপে রাখা অর্থণীতি: মুক্তবাজারের মিথ্যাবাজার

জাতিসমূহের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত কথন

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

সজল রোশানের ' রিলিজিয়াস মাইণ্ডসেট' কেমন?

ভাবাদর্শিক রাষ্ট্রচিন্তা: আলথুসেরের রাষ্ট্রপাঠ