পোস্টগুলি

প্রচলিত মিথের দার্শনিক ও সমাজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ছবি
রূপকথা,  উপকথা,  সংস্কার,  কুসংস্কার,  প্রাচীন গাল-গল্প, প্রচলিত  ধর্মেসমূহের  ভাষ্যসহ নানা বিষয়  মিথের অংশ। সমাজে প্রচলিত মিথগুলো নিছক গল্প বা বিনোদনের জন্য তৈরি হয়নি।  প্রত্যেকটি মিথের রয়েছে নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য ও ব্যাখ্যা। মিথগুলোর বেড়ে ওঠা,  প্রতিষ্ঠিত হওয়া , জনসমাজে প্রভাব ফেলা–  মানুষের  নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের মতোই  জটিল   ও বহুমুখী।  মিথ্  মানুষের মধ্যে মানুষের  অজান্তেই  জন্ম নিয়েছে।  মিথকে কুসংস্কার ও আদিম চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ফেলে দেয়ার জো নেই।  আধুনিক সময়ে, বিজ্ঞানের প্রভাবে মিথের গুরুত্ব অনেক অংশে হারিয়ে গিয়েছে।  এ হারানো অস্তিত্বগুলো হয়তো আর কোনদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় । সময়ের প্রয়োজনে  বেকন, দেকার্তে,  নিউটনসহ অন্যান্য  চিন্তক-বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ১৭শ শতকের দিকে  বিজ্ঞান ও মিথ আলাদা হতে  থাকে।  একেবারে কমন উদাহরণ হিসেবে  বলা যায়, পৃথিবী নানা  জায়গার নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে-শাদী হয়।  এক জায়গার  ...

মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান

ছবি
ইউরোপ শুধুমাত্র কোন ভৌগোলিক অবস্থান নয়- এটি একটি মানসিক প্রবণতা, চিন্তাধারা এবং ক্ষেত্রবিশেষে চাপিয়ে দেওয়া দর্শন। ইউরোপ বা পাশ্চাত্য সারা দুনিয়াকে অস্বীকার করে নিজেদের মতো করে জ্ঞান চর্চা এবং জ্ঞান উৎপাদন করতে পারে, কিন্তু ইউরোপের বাইরের দুনিয়া ইউরোপ ছাড়া কিছুই করতে পারে না। পৃথিবীর আধুনিক জ্ঞান ভান্ডারে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি সংস্কৃত, ফারসি , আরবি ইত্যাদি ভাষায় চর্চিত জ্ঞানগুলোকে। সাবঅল্টার্ন ঐতিহাসিক দীপেশ চক্রবর্তী ভৌগলিক ইউরোপ নয়, মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের মাতব্বরিকে প্রশ্ন করেছেন তার ‘প্রভিনশিয়ালাইজিং ইউরোপ’ বইতে। তিনি দাবি করেছেন, মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু এটি অপরিহার্য নয়। দীপেশ চক্রবর্তী মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেশ কিছু তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। ইউরোপীয় চিন্তার প্রধানতম সমালোচনা হিসেবে তিনি দাঁড় করিয়েছেন ‘ ইতিহাসের বিশ্রামাগার’ বা ওয়েটিং রুম অফ হিস্ট্রি তত্ত্বটি। ইউরোপ দাবি করে রাষ্ট্র, সভ্যতা, নাগরিকত্ব, গণতন্ত্র , সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি তাদের প্রোডাক্ট। সারা দুনিয়া...

উৎসবের অর্থনীতি

ছবি
 সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে নিজস্ব সংস্কৃতি হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, ইংরেজি নববর্ষ পালন, হ্যালোউইন পালন কিংবা মা দিবস/ বাবা দিবস পালন! এই দিবসগুলো পালনে সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েন, উইশ করেন, কে কি করছেন সবাইকে জানান, বাজি পটকা ফোটান, বেলুনে আগুন ধরিয়ে আকাশে উড়ান। এগুলো এদেশে হয় মোটামুটি বিনা বাধায়, কোন রূপ তীব্র সমালোচনা ছাড়াই। ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, ইংরেজি নববর্ষ পালনের উম্মাদনা রিলিজিয়াস প্র্যাকটিস লেভেলে চলে গেছে। আমি ২ বছর আমেরিকা ছিলাম। বাংলাদেশে এসব নিয়ে যতটা উন্মাদনা, সেখানে এর কানাকড়িও নেই। বিগত কয়েক বছরে জাঁকজমক হ্যালোউইন পালনে আমরা প্রায় আমেরিকাকে ধরে ফেলেছি। অন্ততপক্ষে মাতামাতির দিক দিয়ে। ইউরোপ আমেরিকা এসব বিষয়ে আমাদের দেশে রপ্তানি করতে চেয়েছিল কিনা জানিনা, তবে সফট পাওয়ার হিসেবে এগুলো আমরা বেশ ভালোভাবেই আমদানি করেছি। আমি দেখেছি বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে যেভাবে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা হয়, পহেলা বৈশাখ ধারে-পাশেও নেই। যতটুকু হয় সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায়। মফস্বলের সবচেয়ে মহা চোর এবং ধড়িবাজটাও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠ...

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

ছবি
দেরিদা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে খুব প্রাসঙ্গিক। দেশে সাহিত্যিক, চিন্তক বা টেক্সট মেইকারদের সাম্প্রতিক অনলাইন গোলাগুলি ও মারামারি দার্শনিক জাক দেরিদার ‘Deconstruction বা বিনির্মাণ’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। ভাষা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ একটি মাধ্যম। ভাষার মাধ্যমে আমরা সর্বশেষ চূড়ান্ত কোন ধারণা পেতে পারি না। কারণ ভাষা অস্থির, সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আজ যা বোঝাচ্ছে, কাল তা নাও বোঝাতে পারে। আপনি যা বুঝছেন আমি তার উল্টোটা বুঝতে পারি। আমি এখন যা বুঝছি পরে আমার কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ ভাষার বাজারে চিরস্থায়ী ‘বেদবাক্য’ বলে কিছু নেই । আপনি যে কোন টেক্সট বা লেখাকে সমালোচনা করতে পারবেন , নিজের মত করে ব্যাখ্যা বা সমালোচনা করতে পারবেন। সমালোচনার অধিকার সকলের। আপনি যে কোন লেখা বা টেক্সটকে গুরু-লঘু, হালকা- ভারী, সাদা-কালো , ভালো-মন্দ বলতে পারেন। কিন্তু বিনির্মাণে এইসব বাইনারি বিশেষণকে অস্বীকার করা হয়েছে। ভালো মানে আপনার কাছে ভালো, আমার কাছে মন্দ হতে পারে- এবং এটা বলার অধিকার আমার আছে । আসলে এই ধরনের সকল বাইন...

প্রশান্ত বুদ্ধ

ছবি
  কিভাবে বুদ্ধের শিক্ষা ও দর্শন এত দ্রুত সারা দুনিয়া ছড়িয়ে যায়, কি কারণে  বুদ্ধ নিষ্কণ্টকভাবে  ধর্ম প্রচার করতে পেরেছিলে্‌ন,  আর কেনইবা তার ধর্ম-দর্শন  সারা পৃথিবীতে সগৌরবে বিরাজ করলেও জন্মভূমি ভারতবর্ষে মিইয়ে গেছে? বুদ্ধ ছিলেন রাজপুত্র।  তিনি পেয়েছিলেন তৎকালীন এ এলাকার সমস্ত রাজাদের আনুকূল্য। সর্বভারতীয় সম্রাট অশোক,   মগধের রাজা বিম্বিসার, কৌশল্যের  রাজা প্রসেনজিৎ,  সাচি ও বারহুতের শাসনকর্তা, রাজা মিনান্দারসহ   উত্তর-পশ্চিম ভারতের গ্রিক বংশদ্ভুত  শাসকগণ  সকলেই উদারভাবে বুদ্ধের মত গ্রহণ করেছে ও প্রচারে সাহায্য করেছে।  স্বাভাবিকভাবেই,  বুদ্ধের বাবা ও তার সমসাময়িক রাজাগণ সকলে উদার চিত্তে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং এ ধর্মের মহিমা প্রচার করেন । কুষাণ  সম্রাট কনিষ্কের চেষ্টায় প্রথম শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্ম পৌঁছে যায় কাশ্মীর, ইরান,  আফগানিস্তানের কাছাকাছি। শীঘ্রই চীনসহ মধ্য এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে বৌদ্ধধর্ম।  সম্রাট অশোক শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া,  লাউস, থাইল্যান্ডবাসীদের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পাঠান । আজ থেকে ১...

মসলাদার ইতিহাস

ছবি
  উপনিবেশায়নের ইতিহাস রক্তাক্ত। তবে ভারতীয় উপমহাদেশসহ পূর্ব-ভারতীয় দীপপুঞ্জ অঞ্চলের উপনিবেশায়নের ইতিহাস শুধুমাত্র রক্তাক্তই নয়– এ ইতিহাস অধিকতর মসলাযুক্ত। আধা কাঁচা, পোড়ানো স্বাদহীন মাংস, মাছ, মদসহ অন্যান্য ইউরোপীয় খাবারের মধ্যে গোলমরিচ ও লবঙ্গের গুড়ো ছিড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা পৃথিবীর ইতিহাসকে গড়ে তুলেছে নতুনভাবে।   কালিকট শুধু ভারতবর্ষের প্রধান বন্দর ছিল না, ছিল ইতিহাসের দরজা। দিনে দিনে কালিকট হয়ে উঠেছিল এক মৌচাক, সারা দুনিয়ায় এর মধুর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। আকারে ছোট হলেও, দুই হাজার বছর ধরে এর বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি গড়ে তুলেছে ভারতবর্ষের দ্বার হিসেবে। প্রধান বাণিজ্য মসলা, ভারতবর্ষের বাইরে মালয়-ইন্দোনেশিয়া হতে উৎপাদিত মসলাও চলে আসতো কালিকটে। এই মশলা বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ সরাসরি জড়িত ছিল ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের সাথে। নামে ধর্মযুদ্ধ হলেও এ যুদ্ধে বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল আরো বেশি। ধর্ম যুদ্ধের শুরুতে ইউরোপীয় শক্তি সাফল্য লাভ করলেও পরের দিকে ৪র্থ ক্রুসেডে মুসলমানরা বীর সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করে এবং মিশর দখল করে নেয়। ...

ডোনাট মডেলঃ প্রয়োজন নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর

ছবি
  – ভাত দিবার পারোস না ভাতার হবার চাস-  কেমন মরদ তুই হারামজাদা?-কাজী রোজী প্রচলিত এই অর্থনীতি কিছুই দিতে পারেনি।  পৃথিবীর সবাইকে দুবেলা দুমুঠো ভাত দিতে পারেনি,  সবার মাথা গোঁজার  ঠাই দিতে পারেনি। প্রতিরোধ দূরের কথা,  এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা  নিজেই বলতে পারে না সে কবে  ধ্বসে পড়বে।  অল্প কজন মানুষকে সম্পদের পাহাড় গড়তে দিয়ে,  সকলকে করেছে নিঃস্ব- - এ প্রকৃতি ও পরিবেশকে করেছে রিক্ত।  পুরনো আমলের বাসী-পচা এ তত্ত্বগুলো আমরা আওড়ে যাই,  পড়ে যাই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ধরে নেই এ জিডিপির গ্রোথ,  সাপ্লাই-ডিমান্ড থিওরি কিংবা, নিউটনের পদার্থ বিজ্ঞানের  অনুকরণে  জোর করে তৈরি  স্লিম-সেক্সি- অর্থনৈতিক সমীকরণগুলো আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করবে।  কিন্তু হায়! এ বড্ড  সেকেলে, অপ্রয়োজনীয্‌  চাপিয়ে দেওয়া তত্ত্ব ও প্রয়োগ চেপে বসেছে সিন্দাবাদ এর ভূতের মত- না আমরা পারি ছেড়ে দিতে- না সে আমাদের ছেড়ে যায়।   প্রচলিত এই অর্থনীতি শেখায় যোগান-চাহিদার সাম্যবস্থা তৈরি করা; বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে গ্...

ইয়োভাল নো. হারারি কি বলতে চান?

ছবি
  আসলে তিনটা বই এর রিভিউ একসাথে দেয়া যায় না, তাই রিভিউ হিসেবে না দেখে পরিচয় হিসেবে দেখতে পারেন। ইয়োভাল নোয়াহ হারারিকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই, তার একটি বই পড়লে বাকি দুইটিও নিজ থেকেই পড়ে নেবেন-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বলছি সেপিয়েন্স, হোমো ডিউস ও ২১ লেসন্স ফর দ্যা টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি --এই তিন বই এর কথা। সেপিয়েন্সঃ এটি বহুল পঠিত , প্রচলিত। স্বল্প পরিসরেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। তুলে এনেছেন কিভাবে ধাপে ধাপে মহাবিশ্বে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আফ্রিকার জংগল হতে কিভাবে মানুষ কিভাবে সারাদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ৭০হাজার বছর আগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ , ১০ হাজার বছর আগের কৃষি বিপ্লব ও কয়েকশ বছর আগের শিল্পবিপ্লবের হাত ধরেই মানুষ এগিয়েছে। সেপিয়েন্স তার নিজের অগ্রগতির জন্য ধ্বংস করেছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী ও বৃক্ষ । তবে তার গল্প তৈরির ক্ষমতার কারণে সংগঠিত হয়ে ছাড়িয়ে গেছে সকল প্রাণিকুলকে, পৃথিবীর শাসক এখন মানুষ। হোমো ডিউসঃ হারারি এ বইতে ভবিষ্যতের মানুষ নিয়ে কিছু আভাস দিয়েছেন । দ্রুত অগ্রসরমান আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স , বায়োটেকনল...