পোস্টগুলি

হিংসা ব্যবস্থাপনা

প্রতিবার  আমার কোন বন্ধু সফল হয়, আর আমি অল্প একটু করে  মরে যাই- গোর ভিদাল মানুষের সকল আবেগের মধ্যে হিংসা অত্যন্ত জটিল ও আজব।  কমবেশি, সকল মানুষের মধ্যে হিংসা সক্রিয়।  আমার চেয়ে অন্যের বিষয়সম্পত্তি, পাব্লিক এটেনশন, সম্মান , মেধা , যোগ্যতা , ক্ষমতা বেশি আছে - অন্যের চেয়ে আমি ছোট- এ অনুভূতি এক অসহ্য বেদনা। হিংসাই মূলত  আদি পাপ। ইসলাম ধর্মে বর্ণিত হাবিল কাবিলের মারামারি, ওল্ড টেস্টামেনের আবেলেকে কেইনের হ/ত্যা ইত্যাদি হিংসা থেকে উদ্ভুত। এযুগে হিংসা উঠলেই তো আর মে/রে ফেলা যায় না, কিন্তু বাকি যা করা যায় হিংসুটে ব্যক্তি তার সবটাই করে।  আমি কাউকে হিংসা করছি, এটি সবার আগে গোপন করি নিজের কাছে। বিষয়সম্পত্তি, পাব্লিক এটেনশন, সম্মান , ক্ষমতা অন্যের বেশি আছে- এটাকে জাস্টিফাই করি অন্যায়, দুর্ভাগ্য, অসাম্য হিসেবে। যে পেয়েছে তাকে ভাগ্যবান, উচ্চাভিলাষী ,   অসত হিসেবে ট্যাগ দিয়ে দেই। হিংসুটেরা অন্যের অর্জন ধ্বংস করে, সম্মানহানি করে, বদনাম করে, সম্পর্ক নষ্ঠ করে। কিন্তু ভাবখানা এমন করে-হিংসা বলে কিছু নেই, যা করা হচ্ছে তা যথাযথ; অসমতা ও অসচ্ছতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।...

বিষাক্ত মানুষের ছোবল থেকে বেচে থাকা

মানুষের ভালো-মন্দ বলে কিছু নেই । আজ যা ভালো কাল তা মন্দ , আমার কাছে যা ভালো  অন্যের কাছে তা বাজে। সমাজে বেচে থাকতে হলে ভালো-মন্দ মানুষ নিয়েই বেচে থাকতে হয়। তবে বাছাই করে যদি মানুষের সাথে মিশতে হয় তাহলে ক্লাসিফিকেশন হতে পারে বিষাক্ত (Toxic), কম বিষাক্ত, অবিষাক্ত। দুনিয়ায় এত মানুষ, তাই সকল মানুষকে ভাল মানুষে পরিণত করা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়--আদতে প্রয়োজনও নেই। সবচেয়ে ভাল উপায় বিষাক্ত মানুষগুলোকে চিনে ফেলা, তারপর একটু দুরত্ব  বজায় রাখা। এটা করতে পারলে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান। আর যদি সমস্যাগুলো নিজেরও থাকে, তাহলে দ্রুত বিদায় করে ঝরঝরে হয়ে যাওয়া উচিত। জীবন দুর্বিসহ করে দেয়া এ বিষাক্ত মানুষগুলো চোখের দেখায়, কানের শোনায়, অল্প বোঝায় অনেক বেশি চার্মিং ও এট্রাক্টিভ হতে পারে। এদের  চার্মিং ইনিশিয়াল ইম্প্রেশনের ফাদে পরে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মানুষ এ বিষগুলো কিছুটা পায় জেনেটিক্যালি, সিংহভাগআসে শিশুকালের গ্রুমিং/বেড়ে উঠার পরিবেশ বা পরিবার থেকে, বাকিটা সামান্য আসে টিনেজ পরবর্তী জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে।  বিষাক্ত মানুষগুলোর প্রধান প্রকার...

ইনফেকশন: এভয়েড দ্যা আনহ্যাপি এন্ড আনলাকি

কেইস-১: ড্যান্সার ও পারফর্মার হিসেবে সফল হবার জন্য ১৮৪০ সালে ২২ বছর বয়সে মেরি গিলবারট আয়ারল্যান্ড থেকে প্যারিসে চলে আসে এবং লোলা মন্তেস নাম ধারণ করে। নাচের জগতে সফল না হতে পেরে আদিম পেশা শুরু করে। ভীষণ সুন্দরী হওয়ার সুবাদে বারবনিতা হিসেবে দ্রুত নাম কামায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় শুধুমাত্র আলেকজান্ডার ডু যারিয়া প্যারিসে লোলার নাচের ক্যারিয়ারকে নতুন জীবন দান করতে পারে। আলেকজান্ডার ছিল ফ্রান্সের বড় পত্রিকার মালিক, ধনী ও শিল্প সাহিত্য বিশেষজ্ঞ। লোলা তাকে টার্গেট করে। তথ্য পায়, আলেকজান্ডার সকালে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে বের হয়। লোলাও ভীষণ ভালো হর্স রাইডার । একদিন ইচ্ছে করে দুর্ঘটনার ভান করে আলেকজান্ডারের ঘোড়ার উপর পড়ে যায়। এরপর প্রতিদিন তারা একসাথে ঘোড়া নিয়ে বের হত, এক মাসের মধ্যেই লোলা আলেকজান্ডারের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করে। আলেকজান্ডার গভীর প্রেমে পড়তে থাকে, বিয়ের কথা ভাবতে থাকে। প্রেমিকের প্রভাবে লোলার নাচের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হতে থাকে। তবে সমস্যা হলো--লোলা ১৯ বছর বয়সেই পালিয়ে বিয়ে করে ডিভোর্স ছাড়াই প্যারিসে চলে এসেছিল। হঠাৎ আলেকজান্ডারের ব্যবসা এবং এবং সামাজিক প্র...

প্রচলিত মিথের দার্শনিক ও সমাজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ছবি
রূপকথা,  উপকথা,  সংস্কার,  কুসংস্কার,  প্রাচীন গাল-গল্প, প্রচলিত  ধর্মেসমূহের  ভাষ্যসহ নানা বিষয়  মিথের অংশ। সমাজে প্রচলিত মিথগুলো নিছক গল্প বা বিনোদনের জন্য তৈরি হয়নি।  প্রত্যেকটি মিথের রয়েছে নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য ও ব্যাখ্যা। মিথগুলোর বেড়ে ওঠা,  প্রতিষ্ঠিত হওয়া , জনসমাজে প্রভাব ফেলা–  মানুষের  নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের মতোই  জটিল   ও বহুমুখী।  মিথ্  মানুষের মধ্যে মানুষের  অজান্তেই  জন্ম নিয়েছে।  মিথকে কুসংস্কার ও আদিম চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ফেলে দেয়ার জো নেই।  আধুনিক সময়ে, বিজ্ঞানের প্রভাবে মিথের গুরুত্ব অনেক অংশে হারিয়ে গিয়েছে।  এ হারানো অস্তিত্বগুলো হয়তো আর কোনদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় । সময়ের প্রয়োজনে  বেকন, দেকার্তে,  নিউটনসহ অন্যান্য  চিন্তক-বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ১৭শ শতকের দিকে  বিজ্ঞান ও মিথ আলাদা হতে  থাকে।  একেবারে কমন উদাহরণ হিসেবে  বলা যায়, পৃথিবী নানা  জায়গার নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে-শাদী হয়।  এক জায়গার  ...

মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান

ছবি
ইউরোপ শুধুমাত্র কোন ভৌগোলিক অবস্থান নয়- এটি একটি মানসিক প্রবণতা, চিন্তাধারা এবং ক্ষেত্রবিশেষে চাপিয়ে দেওয়া দর্শন। ইউরোপ বা পাশ্চাত্য সারা দুনিয়াকে অস্বীকার করে নিজেদের মতো করে জ্ঞান চর্চা এবং জ্ঞান উৎপাদন করতে পারে, কিন্তু ইউরোপের বাইরের দুনিয়া ইউরোপ ছাড়া কিছুই করতে পারে না। পৃথিবীর আধুনিক জ্ঞান ভান্ডারে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি সংস্কৃত, ফারসি , আরবি ইত্যাদি ভাষায় চর্চিত জ্ঞানগুলোকে। সাবঅল্টার্ন ঐতিহাসিক দীপেশ চক্রবর্তী ভৌগলিক ইউরোপ নয়, মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের মাতব্বরিকে প্রশ্ন করেছেন তার ‘প্রভিনশিয়ালাইজিং ইউরোপ’ বইতে। তিনি দাবি করেছেন, মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু এটি অপরিহার্য নয়। দীপেশ চক্রবর্তী মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেশ কিছু তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। ইউরোপীয় চিন্তার প্রধানতম সমালোচনা হিসেবে তিনি দাঁড় করিয়েছেন ‘ ইতিহাসের বিশ্রামাগার’ বা ওয়েটিং রুম অফ হিস্ট্রি তত্ত্বটি। ইউরোপ দাবি করে রাষ্ট্র, সভ্যতা, নাগরিকত্ব, গণতন্ত্র , সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি তাদের প্রোডাক্ট। সারা দুনিয়া...

উৎসবের অর্থনীতি

ছবি
 সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের এই মুহূর্তে নিজস্ব সংস্কৃতি হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, ইংরেজি নববর্ষ পালন, হ্যালোউইন পালন কিংবা মা দিবস/ বাবা দিবস পালন! এই দিবসগুলো পালনে সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়েন, উইশ করেন, কে কি করছেন সবাইকে জানান, বাজি পটকা ফোটান, বেলুনে আগুন ধরিয়ে আকাশে উড়ান। এগুলো এদেশে হয় মোটামুটি বিনা বাধায়, কোন রূপ তীব্র সমালোচনা ছাড়াই। ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, ইংরেজি নববর্ষ পালনের উম্মাদনা রিলিজিয়াস প্র্যাকটিস লেভেলে চলে গেছে। আমি ২ বছর আমেরিকা ছিলাম। বাংলাদেশে এসব নিয়ে যতটা উন্মাদনা, সেখানে এর কানাকড়িও নেই। বিগত কয়েক বছরে জাঁকজমক হ্যালোউইন পালনে আমরা প্রায় আমেরিকাকে ধরে ফেলেছি। অন্ততপক্ষে মাতামাতির দিক দিয়ে। ইউরোপ আমেরিকা এসব বিষয়ে আমাদের দেশে রপ্তানি করতে চেয়েছিল কিনা জানিনা, তবে সফট পাওয়ার হিসেবে এগুলো আমরা বেশ ভালোভাবেই আমদানি করেছি। আমি দেখেছি বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে যেভাবে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা হয়, পহেলা বৈশাখ ধারে-পাশেও নেই। যতটুকু হয় সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায়। মফস্বলের সবচেয়ে মহা চোর এবং ধড়িবাজটাও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠ...

বিনির্মাণঃ ধ্বংসাত্মক সমালোচনার বৈধতা

ছবি
দেরিদা এই মুহুর্তে বাংলাদেশে খুব প্রাসঙ্গিক। দেশে সাহিত্যিক, চিন্তক বা টেক্সট মেইকারদের সাম্প্রতিক অনলাইন গোলাগুলি ও মারামারি দার্শনিক জাক দেরিদার ‘Deconstruction বা বিনির্মাণ’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। ভাষা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ একটি মাধ্যম। ভাষার মাধ্যমে আমরা সর্বশেষ চূড়ান্ত কোন ধারণা পেতে পারি না। কারণ ভাষা অস্থির, সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আজ যা বোঝাচ্ছে, কাল তা নাও বোঝাতে পারে। আপনি যা বুঝছেন আমি তার উল্টোটা বুঝতে পারি। আমি এখন যা বুঝছি পরে আমার কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ ভাষার বাজারে চিরস্থায়ী ‘বেদবাক্য’ বলে কিছু নেই । আপনি যে কোন টেক্সট বা লেখাকে সমালোচনা করতে পারবেন , নিজের মত করে ব্যাখ্যা বা সমালোচনা করতে পারবেন। সমালোচনার অধিকার সকলের। আপনি যে কোন লেখা বা টেক্সটকে গুরু-লঘু, হালকা- ভারী, সাদা-কালো , ভালো-মন্দ বলতে পারেন। কিন্তু বিনির্মাণে এইসব বাইনারি বিশেষণকে অস্বীকার করা হয়েছে। ভালো মানে আপনার কাছে ভালো, আমার কাছে মন্দ হতে পারে- এবং এটা বলার অধিকার আমার আছে । আসলে এই ধরনের সকল বাইন...

প্রশান্ত বুদ্ধ

ছবি
  কিভাবে বুদ্ধের শিক্ষা ও দর্শন এত দ্রুত সারা দুনিয়া ছড়িয়ে যায়, কি কারণে  বুদ্ধ নিষ্কণ্টকভাবে  ধর্ম প্রচার করতে পেরেছিলে্‌ন,  আর কেনইবা তার ধর্ম-দর্শন  সারা পৃথিবীতে সগৌরবে বিরাজ করলেও জন্মভূমি ভারতবর্ষে মিইয়ে গেছে? বুদ্ধ ছিলেন রাজপুত্র।  তিনি পেয়েছিলেন তৎকালীন এ এলাকার সমস্ত রাজাদের আনুকূল্য। সর্বভারতীয় সম্রাট অশোক,   মগধের রাজা বিম্বিসার, কৌশল্যের  রাজা প্রসেনজিৎ,  সাচি ও বারহুতের শাসনকর্তা, রাজা মিনান্দারসহ   উত্তর-পশ্চিম ভারতের গ্রিক বংশদ্ভুত  শাসকগণ  সকলেই উদারভাবে বুদ্ধের মত গ্রহণ করেছে ও প্রচারে সাহায্য করেছে।  স্বাভাবিকভাবেই,  বুদ্ধের বাবা ও তার সমসাময়িক রাজাগণ সকলে উদার চিত্তে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং এ ধর্মের মহিমা প্রচার করেন । কুষাণ  সম্রাট কনিষ্কের চেষ্টায় প্রথম শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্ম পৌঁছে যায় কাশ্মীর, ইরান,  আফগানিস্তানের কাছাকাছি। শীঘ্রই চীনসহ মধ্য এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে বৌদ্ধধর্ম।  সম্রাট অশোক শ্রীলংকা, কম্বোডিয়া,  লাউস, থাইল্যান্ডবাসীদের কাছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পাঠান । আজ থেকে ১...