পোস্টগুলি

ট্রেন্ড কেন নর্ম নয়?

 কেউ কেউ ফেসবুকার, ইউটিউবার , টিকটকার, ফুড ব্লগার হতে চাইলে মন খারাপ করার কিছু নেই। এটা আসলে সময়ের দাবী। বাংলাদেশীরা যে হতে চায় এমন না, সব দেশেই হতে চায়। যেখানে যেটা বেশি চাহিদা , হাইপ বেশি, পপুলারিটি বেশি, সাপ্লাই সেটার আসবেই। এটা এডাম স্মিথ বলে গেছেন। কথাটা সব সময়ের জন্য সত্য।  ১৭২০ সাল। সরকারের হস্তক্ষেপে স্টক মার্কেট রমরমা। বুদ্ধিমান ও পাকা এক ব্যক্তি নিজের বুদ্ধি ও দক্ষতাবলে কামানো টাকা হিসেব করে ইনভেস্ট করলেন 'সাউথ সি কোম্পানির' স্টকে। অল্পদিনে এই কোম্পানির শেয়ার আকাশে উঠছিল। চতুর এই লোক ঝোপ বুঝে কোপ মারলেন। ১০০% প্রফিটে সে সময়ে ৭০০০ পাউন্ড লাভ করলেন। যে শেয়ারের দাম জানুয়ারীতে ১২৮ পাউন্ড , জুলাইতে হাজার পার হয়ে যাচ্ছিল।  তার আবার খচখচানি শুরু হয়ে গেল। আশে পাশে সবাই পাউন্ড ঢালছিল আর লাভের খবর দিচ্ছিল। পাউন্ডের গন্ধ  আকাশ বাতাস ম-ম করছিল। যারা পাচক, ক্লিনার, হোম সার্ভেন্ট হিসেবে কাজ করত, তারাও বাষ্প সকট কিনে ড্রাইভার রাখা শুরু করল, নিজেদের জন্যেই আবার পাচক ক্লিনার রাখা শুরু হলো।  স্মার্ট ব্যক্তিটি আর চুপ থাক্তে পারলেন না। লাভের টাকার সাথে আরো ধারদেনা করলেন ,...

বিত্ত নয় চাই পূর্ণতা

 জীবনের ভ্রমণ নাতিদীর্ঘ। দম ফেলার আগেই শেষ। এ জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অনুভূতির নাম কি সুখ? আদতে সুখ বায়োলজিক্যালি ক্ষণস্থায়ী এক অনূভুতি। এর  স্থায়ীত্ব দেয়া সম্ভব না। সুখ নয়, বরং ক্ষণস্থায়ী এ জীবনের সবচেয়ে  কাঙখিত অনূভূতি হওয়া উচিত পরিপূর্ণতা। পরিপূর্ণ পরিপরিপূর্ণতা খুজে পাওয়াও  মোটামুটি অসম্ভব। পরিপূর্ণতার যতটা কাছাকাছি পৌছা  যায়- সেটাই হওয়া উচিত জীবন চলার লক্ষ্য।  শুধু নিজেকে নিয়ে মানুষের পরিপূর্নতা পাওয়া সম্ভব না। একক মানুষ অসম্পুর্ণ, অপরিপূর্ণ। নিজে ভাল খেলে,  পরলে, পড়লে,   ঘুরলে,  থাকলে, জ্ঞান অর্জন করলে  সাময়িক সুখ আসে, কিছু সময় পর  আবার এ অনুভুতি চলে যায়।  আমরা ছয় মিলিয়ন বছর ধরে  সার্ভাইভ করতে শিখেছি পরিবার , গোত্র হিসেবে। ১০হাজার বছর ধরে সভ্য হতে শিখছি সমাজ , দেশ ও বিশ্বপটের সন্তান হিসেবে। আমরা একক কেউ না। একক হিসবে কখনো কোথাও ছিলাম না। সবাই মিলে আমরা পরিপূর্ণ।  নিজের অর্জিত অর্থ-বিত্ত-জ্ঞান আমাদের পরিবার, আপনজন,  সমাজ , দেশ ও বিশ্বমানবতার কোন কাজে লাগাতে পারলে  আমাদেরকে পরিপূর্ণতার অনুভুতি দিতে প...

মৃত্যুচিন্তা

পৃথিবী নামক গ্রহের জন্মের সম্ভাবনা ছিল প্রায় শূন্য। পিতামাতার মিলন এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা, এবং আমাদের জন্মও একটি মহাঅলৌকিক ও অনিশ্চিত ঘটনার সাক্ষী। আপনার বা আমার জন্ম না হওয়ার লক্ষ কোটি কারণ ছিল, কিন্তু আমাদের মৃত্যু সবচেয়ে সুনিশ্চিত ও অবশ্যম্ভাবী। আমরা কত পার্থক্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করি—কেউ গরীব, কেউ ধনী, কেউ সাদা, কেউ কালো। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্ক্সবাদী আজরাইল বা যমদূত সবাইকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে অন্তিম সাম্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমাদের সবাইকে এক বিন্দুতে মিলিত করেন।  মানুষই বা কেন, ধোঁয়া বা কুয়াশার সাথে আমাদের কোনো পার্থক্য নেই। আমরাও দূর শুন্যে মিলিয়ে যাই। কিন্তু হায়, আমরা প্রায় সকলেই জীবন অতিবাহিত করি মৃত্যুচিন্তা এড়িয়ে। এ এক মহাভুল। আধুনিক পুঁজিবাদী শহুরে জীবন মৃত্যুকে গোপন করার এক মহাপ্রচেষ্টা। মৃত্যু হয় হাসপাতালে, কবর হয় দূর গোরস্থানে। আপনজন কেউ মারা না গেলে জানতেও পারি না যে প্রতিদিন কত শত মানুষ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করছে।  আমরাও কত প্রচেষ্টা নিই, কত কিছু করি এ চিন্তা এড়িয়ে যেতে। ভুলে থাকি আমাদের সবচেয়ে নিশ্চিত গন্তব্য মৃত্যু। কত তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাতিয়ে রাখে আমাদের সমাজ, মি...

শত্রু নয় বন্ধু

 শত্রু বা কম্পিটিটর খুব আন্ডাররেটেড একটা বিষয়। মানুষ মনে করে এরা খালি ক্ষতি করে। ব্যাপারটা আসলে উল্টা।  আমি আপনি কতদূর যাব এটা বোঝা যাবে আমাদের শত্রুদের কোয়ালিটি দেখে। আপনি জানেন এরা আপনার অগ্রগতিতে ঈর্ষান্বিত।  যে কোন সময় বাশঁ দিতে পারে। আপনার কাজ হলো ডিফেন্স তৈরি করা, নিজেকে আরেকটু উচুঁতে নেয়া, যাতে তারা নাগাল না পায়। এভাবেই মানুষ বড় বড় শত্রু লালন-পালন করে নিজেকে অনেক উচুঁতে নিয়ে যায়। শত্রু লালন-পালন করা এনিম্যাল হাসবেন্ড্রির মতই একটা এপ্লায়েড সায়েন্স। গরুর খামারে লাভ করতে চাইলে প্রথম শর্ত ভাল জাতের বাছুর বা বকনা বাছাই করতে হয়। আমাদেরকেও উচুঁ জাতের শত্রু বাছাই করা উচিৎ।  ভালো হয় আমাদের চেয়ে কয়েক ধাপ উপরের। নিচু জাতের শত্রু কোন কাজের না। এরা এখানে সেখানে একটু বদনাম করবে, বা চুলকিয়ে দেবে। তাদের পেছনে সময় দিলে আপনি প্রফিট করতে পারবেন না। হুদাই সময় নষ্ট, এনার্জি নষ্ট।  এমন কেউ নাই এই মুহুর্তে? তাহলে আপনি দিনে দিনে লেইম বা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছেন। এটা একটা বাজে ব্যাপার হতে যাচ্ছে। ইউ উইল স্টপ গ্রোয়িং। মানুষ কখনোই স্ট্যাগনেন্ট থাকে না। উপরে যাওয়ার পুশ না থাকলে , চেষ...

লিডারশিপ ফর লেডিজ

এর আগে লিডারশিপ নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা লিখেছি। এ অংশটুকু ঐ লেখাতে দিতে পারতাম।   কিন্তু বিতর্ক তৈরি হতে পারত এবং লেখার মূল ফোকাস সরে যেতে পারত।  অযথাই কিছু লোক ধর্মীয় ও কালচারাল ইস্যু টেনে  ঘোট পাকাতে পারে, সে ভয়ে এ অংশ  চেপে গিয়েছি।  আদিম গোত্র  ভিত্তিক সাম্যবাদী সমাজে নেতৃত্বের পদ ছিল শামান বা মহিলা শামান। গোত্রের কালচার ও প্রয়োজনীয়তা উপর নির্ভর  করে লিঙ্গভিত্তিক নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হতো। তবে আদিম সমাজে   প্রায়শই নারীরা দল পরিচালনা করত ও তাদের দেবদেবীদের  সাথে যোগাযোগ রাখত।   কৃষি কাজের উদ্ভব পুরো সিস্টেমে একটা গোলমাল এনে দেয়। সম্পদের মালিকানার  বিষয়ে চলে আসে, উত্তরসুরির  প্রয়োজন হয়,  বিবাহ প্রথা স্থায়ীত্ব  লাভ করে।  অধিক শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা হেতু মেয়েদের প্রেগনেন্সির পরিমাণ, মোট প্রেগনেন্সির সময়কাল  ও সন্তান জন্মদান কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি লাভ করে । নেতৃত্বের জায়গাটি আস্তে আস্তে হাতছাড়া হয়ে যায়। বিষয়টি লক্ষণীয় যে,  কৃষিকাজ মেয়েদের মাধ্যমে শুরু হলেও এটি তাদের জন্য নেগেটিভ হিস...

রুগ্ন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কাঠামো

 বছর দুয়েক আমেরিকায় ছিলাম। শহরের নাম সিটি অফ কলেজস্টেশন। টেক্সাস এএন্ডএম  ইউনিভার্সিটি  আদিকালে কলেজ ছিল।  কলেজের ধারে রেলস্টেশন ।  স্টেশনের নামে  শহরের নাম  সিটি অফ কলেজস্টেশন।     বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক লোকজন শহরে বসবাস করে,  উচ্চ শিক্ষিতের হার  বেশি। ২০২২ সালে   মেয়র নির্বাচিত হন জন নিকোলস।  নির্বাচনে ৯৫হাজার  ভোটারের মধ্যে ২১হাজার  ভোট পড়ে।  ভোট প্রদানের হার ২২%।  তবে গতবার ছিল ব্যতিক্রম,  এর আগের নির্বাচনগুলোতে ৭% ,  ১০% পর্যন্ত ভোট কাস্টিং হয়েছে।   শুধুমাত্র সিটি মেয়র নয়,  কাউন্টি জাজ,  স্কুল  ডিস্ট্রিক্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, স্টেট গভর্নর পর্যন্ত নানা জাতের স্থানীয় সরকার পদ  ঐ দেশে।  কমবেশি হতে পারে,  তবে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এ সকল পদে  ভোটার টার্নআউট  ৫% থেকে ৩০% এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শুধু  আমেরিকা নয়,  কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের  নানা দেশে লোকাল গভর্মেন্টের সকল পদে  চিত্র মোটামুটি একই।   উন...

ডিভাইড এন্ড রুল

 ডিভাইড এন্ড রুল- প্রবাদটি শুনলেই মনে পড়ে ব্রিটিশদের কথা। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে প্রায় ২০০ বছর ভারত উপমহাদেশ শাসন করে গেছে ইংরেজরা। তবে এই আইডিয়া আরো বহু পুরোনো। এই ফ্রেজের  বুতপত্তি ল্যাটিন Divide et empera থেকে।  লিখিত ও সুস্পষ্টভাবে প্রথম এ ধারণা পাওয়া যায় আজ থেকে ২৫০০  বছর আগে চাইনিজ সমরনায়ক ও দার্শনিক সান জু এর লিখিত স্ক্রিপচারে; আমাদের কাছে পরিচিত আর্ট অফ ওয়ার নামে। তিনি লিখেছেন, ডিভাইড এণ্ড কনকোয়ার। তার মতে, শত্রুকে ভাগ করে ফেললে অস্ত্র না ধরেও যুদ্ধ বা দেশ জয় করা যায়।  ডিভাইড এন্ড রুল ধারণাটি এখনো বহুল চর্চিত। দেশে দেশে জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দিয়ে, অশান্তি সৃষ্ঠি করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে আধুনিক সিউডো-ইম্পেরিয়ালিস্টরা। আফ্রিকা কিংবা মধ্য প্রাচ্যের দিকে তাকালেই দেখবেন কোথাও তেলের জন্য , কোথাও সোনা-দানা- হীরাসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে একই দেশে নানা জাতিভেদ তৈরি করে শোষণ চলমান। আবার অনেক অভ্যন্তরীণ  রাজনৈতিক শক্তি নানা গোত্র বা এলাকার মধ্যে বিভক্তি তৈরি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। আসল কথায় আসি। ডিভাইড এন্ড রুল এক চিরন্তন কার্যকরী হাতিয়া...

পরিপূর্ণতা: জীবনের সবচেয়ে কাঙ্খিত অনুভূতি

জীবনের ভ্রমণ নাতিদীর্ঘ। দম ফেলার আগেই শেষ। এ জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অনুভূতির নাম কি সুখ? আদতে সুখ বায়োলজিক্যালি ক্ষণস্থায়ী এক অনূভুতি। এর  স্থায়ীত্ব দেয়া সম্ভব না। সুখ নয়, বরং ক্ষণস্থায়ী এ জীবনের সবচেয়ে  কাঙখিত অনূভূতি হওয়া উচিত পরিপূর্ণতা। পরিপূর্ণ পরিপরিপূর্ণতা খুজে পাওয়াও  মোটামুটি অসম্ভব। পরিপূর্ণতার যতটা কাছাকাছি পৌছা  যায়- সেটাই হওয়া উচিত জীবন চলার লক্ষ্য।  শুধু নিজেকে নিয়ে মানুষের পরিপূর্নতা পাওয়া সম্ভব না। একক মানুষ অসম্পুর্ণ, অপরিপূর্ণ। নিজে ভাল খেলে,  পরলে, পড়লে,   ঘুরলে,  থাকলে, জ্ঞান অর্জন করলে  সাময়িক সুখ আসে, কিছু সময় পর  আবার এ অনুভুতি চলে যায়।  আমরা ছয় মিলিয়ন বছর ধরে  সার্ভাইভ করতে শিখেছি পরিবার , গোত্র হিসেবে। ১০হাজার বছর ধরে সভ্য হতে শিখছি সমাজ , দেশ ও বিশ্বপটের সন্তান হিসেবে। আমরা একক কেউ না। একক হিসবে কখনো কোথাও ছিলাম না। সবাই মিলে আমরা পরিপূর্ণ।  নিজের অর্জিত অর্থ-বিত্ত-জ্ঞান আমাদের পরিবার, আপনজন,  সমাজ , দেশ ও বিশ্বমানবতার কোন কাজে লাগাতে পারলে  আমাদেরকে পরিপূর্ণতার অনু...

ইউনিভার্সাল কোডিং

 "ব্যাথা থাকবেই, কিন্তু কষ্টকেই ভালোবাসতে শেখো।”- বুদ্ধ ছোটবেলায় কিরামান-কাতিবিন এর মোড অফ একশন বোঝার চেষ্ঠা করতাম। দুজনে মিলে  ৬০০ কোটি মানুষের ডাটা ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করে? কিরামান-কাতিবিন, চিত্রগুপ্ত, গার্ডিয়ান এঞ্জেল, রেকর্ডিং এঞ্জেলদের কাজ ছোটবেলায় যতটা কঠিন মনে হতো এখন অত কঠিন মনে হয় না।  মেসেঞ্জার , হোয়াটসএপ, গুগল ,  সিসিটিভি বা এই টাইপের একটা-দুইটা এপস এর সাথে একটা-দুইটা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি  দিয়ে ডাটা সর্টিং আর প্রসেসিং করার সুযোগ করে দিলেই কাজটা সহজ। এগুলোর কোডিং একটু ভাল হলেই ১০০% ডাটা ম্যানেজমেন্ট করা যাবে। লাইনে আসি। কোডিং জিনিসটার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। সৃষ্টিকর্তা/মাদার নেচার প্রতিদিন নিজে বা তার এঞ্জেল রিসোর্স মেনেজমেন্ট সিস্টেমে/ ন্যাচারাল মেনেজমেন্ট সিস্টেমে  প্রত্যেক দায়িতপ্রাপ্ত এঞ্জেলদের/ন্যাচারাল একটরদের  এত দৌড়াদৌড়ি করে সকল জীবের জন্ম-মৃত্যু- কর্ম সম্পাদন করা, কর্মের ফিরিস্তি প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে আলাদা করে হিসেব করা/আপডেট করা, সিস্টেম  ঠিকঠাক রাখার লেস এফিশিয়েন্ট পদ্ধতিতে যাওয়ার কথা না।  হতে পারে, ...

হিংসা ব্যবস্থাপনা

প্রতিবার  আমার কোন বন্ধু সফল হয়, আর আমি অল্প একটু করে  মরে যাই- গোর ভিদাল মানুষের সকল আবেগের মধ্যে হিংসা অত্যন্ত জটিল ও আজব।  কমবেশি, সকল মানুষের মধ্যে হিংসা সক্রিয়।  আমার চেয়ে অন্যের বিষয়সম্পত্তি, পাব্লিক এটেনশন, সম্মান , মেধা , যোগ্যতা , ক্ষমতা বেশি আছে - অন্যের চেয়ে আমি ছোট- এ অনুভূতি এক অসহ্য বেদনা। হিংসাই মূলত  আদি পাপ। ইসলাম ধর্মে বর্ণিত হাবিল কাবিলের মারামারি, ওল্ড টেস্টামেনের আবেলেকে কেইনের হ/ত্যা ইত্যাদি হিংসা থেকে উদ্ভুত। এযুগে হিংসা উঠলেই তো আর মে/রে ফেলা যায় না, কিন্তু বাকি যা করা যায় হিংসুটে ব্যক্তি তার সবটাই করে।  আমি কাউকে হিংসা করছি, এটি সবার আগে গোপন করি নিজের কাছে। বিষয়সম্পত্তি, পাব্লিক এটেনশন, সম্মান , ক্ষমতা অন্যের বেশি আছে- এটাকে জাস্টিফাই করি অন্যায়, দুর্ভাগ্য, অসাম্য হিসেবে। যে পেয়েছে তাকে ভাগ্যবান, উচ্চাভিলাষী ,   অসত হিসেবে ট্যাগ দিয়ে দেই। হিংসুটেরা অন্যের অর্জন ধ্বংস করে, সম্মানহানি করে, বদনাম করে, সম্পর্ক নষ্ঠ করে। কিন্তু ভাবখানা এমন করে-হিংসা বলে কিছু নেই, যা করা হচ্ছে তা যথাযথ; অসমতা ও অসচ্ছতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।...

বিষাক্ত মানুষের ছোবল থেকে বেচে থাকা

মানুষের ভালো-মন্দ বলে কিছু নেই । আজ যা ভালো কাল তা মন্দ , আমার কাছে যা ভালো  অন্যের কাছে তা বাজে। সমাজে বেচে থাকতে হলে ভালো-মন্দ মানুষ নিয়েই বেচে থাকতে হয়। তবে বাছাই করে যদি মানুষের সাথে মিশতে হয় তাহলে ক্লাসিফিকেশন হতে পারে বিষাক্ত (Toxic), কম বিষাক্ত, অবিষাক্ত। দুনিয়ায় এত মানুষ, তাই সকল মানুষকে ভাল মানুষে পরিণত করা আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়--আদতে প্রয়োজনও নেই। সবচেয়ে ভাল উপায় বিষাক্ত মানুষগুলোকে চিনে ফেলা, তারপর একটু দুরত্ব  বজায় রাখা। এটা করতে পারলে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান। আর যদি সমস্যাগুলো নিজেরও থাকে, তাহলে দ্রুত বিদায় করে ঝরঝরে হয়ে যাওয়া উচিত। জীবন দুর্বিসহ করে দেয়া এ বিষাক্ত মানুষগুলো চোখের দেখায়, কানের শোনায়, অল্প বোঝায় অনেক বেশি চার্মিং ও এট্রাক্টিভ হতে পারে। এদের  চার্মিং ইনিশিয়াল ইম্প্রেশনের ফাদে পরে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মানুষ এ বিষগুলো কিছুটা পায় জেনেটিক্যালি, সিংহভাগআসে শিশুকালের গ্রুমিং/বেড়ে উঠার পরিবেশ বা পরিবার থেকে, বাকিটা সামান্য আসে টিনেজ পরবর্তী জীবন ও অভিজ্ঞতা থেকে।  বিষাক্ত মানুষগুলোর প্রধান প্রকার...

ইনফেকশন: এভয়েড দ্যা আনহ্যাপি এন্ড আনলাকি

কেইস-১: ড্যান্সার ও পারফর্মার হিসেবে সফল হবার জন্য ১৮৪০ সালে ২২ বছর বয়সে মেরি গিলবারট আয়ারল্যান্ড থেকে প্যারিসে চলে আসে এবং লোলা মন্তেস নাম ধারণ করে। নাচের জগতে সফল না হতে পেরে আদিম পেশা শুরু করে। ভীষণ সুন্দরী হওয়ার সুবাদে বারবনিতা হিসেবে দ্রুত নাম কামায়। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায় শুধুমাত্র আলেকজান্ডার ডু যারিয়া প্যারিসে লোলার নাচের ক্যারিয়ারকে নতুন জীবন দান করতে পারে। আলেকজান্ডার ছিল ফ্রান্সের বড় পত্রিকার মালিক, ধনী ও শিল্প সাহিত্য বিশেষজ্ঞ। লোলা তাকে টার্গেট করে। তথ্য পায়, আলেকজান্ডার সকালে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে বের হয়। লোলাও ভীষণ ভালো হর্স রাইডার । একদিন ইচ্ছে করে দুর্ঘটনার ভান করে আলেকজান্ডারের ঘোড়ার উপর পড়ে যায়। এরপর প্রতিদিন তারা একসাথে ঘোড়া নিয়ে বের হত, এক মাসের মধ্যেই লোলা আলেকজান্ডারের ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করে। আলেকজান্ডার গভীর প্রেমে পড়তে থাকে, বিয়ের কথা ভাবতে থাকে। প্রেমিকের প্রভাবে লোলার নাচের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হতে থাকে। তবে সমস্যা হলো--লোলা ১৯ বছর বয়সেই পালিয়ে বিয়ে করে ডিভোর্স ছাড়াই প্যারিসে চলে এসেছিল। হঠাৎ আলেকজান্ডারের ব্যবসা এবং এবং সামাজিক প্র...

প্রচলিত মিথের দার্শনিক ও সমাজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ছবি
রূপকথা,  উপকথা,  সংস্কার,  কুসংস্কার,  প্রাচীন গাল-গল্প, প্রচলিত  ধর্মেসমূহের  ভাষ্যসহ নানা বিষয়  মিথের অংশ। সমাজে প্রচলিত মিথগুলো নিছক গল্প বা বিনোদনের জন্য তৈরি হয়নি।  প্রত্যেকটি মিথের রয়েছে নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য ও ব্যাখ্যা। মিথগুলোর বেড়ে ওঠা,  প্রতিষ্ঠিত হওয়া , জনসমাজে প্রভাব ফেলা–  মানুষের  নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের মতোই  জটিল   ও বহুমুখী।  মিথ্  মানুষের মধ্যে মানুষের  অজান্তেই  জন্ম নিয়েছে।  মিথকে কুসংস্কার ও আদিম চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ফেলে দেয়ার জো নেই।  আধুনিক সময়ে, বিজ্ঞানের প্রভাবে মিথের গুরুত্ব অনেক অংশে হারিয়ে গিয়েছে।  এ হারানো অস্তিত্বগুলো হয়তো আর কোনদিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় । সময়ের প্রয়োজনে  বেকন, দেকার্তে,  নিউটনসহ অন্যান্য  চিন্তক-বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে ১৭শ শতকের দিকে  বিজ্ঞান ও মিথ আলাদা হতে  থাকে।  একেবারে কমন উদাহরণ হিসেবে  বলা যায়, পৃথিবী নানা  জায়গার নানা ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে-শাদী হয়।  এক জায়গার  ...

মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান

ছবি
ইউরোপ শুধুমাত্র কোন ভৌগোলিক অবস্থান নয়- এটি একটি মানসিক প্রবণতা, চিন্তাধারা এবং ক্ষেত্রবিশেষে চাপিয়ে দেওয়া দর্শন। ইউরোপ বা পাশ্চাত্য সারা দুনিয়াকে অস্বীকার করে নিজেদের মতো করে জ্ঞান চর্চা এবং জ্ঞান উৎপাদন করতে পারে, কিন্তু ইউরোপের বাইরের দুনিয়া ইউরোপ ছাড়া কিছুই করতে পারে না। পৃথিবীর আধুনিক জ্ঞান ভান্ডারে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি সংস্কৃত, ফারসি , আরবি ইত্যাদি ভাষায় চর্চিত জ্ঞানগুলোকে। সাবঅল্টার্ন ঐতিহাসিক দীপেশ চক্রবর্তী ভৌগলিক ইউরোপ নয়, মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের মাতব্বরিকে প্রশ্ন করেছেন তার ‘প্রভিনশিয়ালাইজিং ইউরোপ’ বইতে। তিনি দাবি করেছেন, মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু এটি অপরিহার্য নয়। দীপেশ চক্রবর্তী মনস্তাত্ত্বিক ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বেশ কিছু তত্ত্বের অবতারণা করেছেন। ইউরোপীয় চিন্তার প্রধানতম সমালোচনা হিসেবে তিনি দাঁড় করিয়েছেন ‘ ইতিহাসের বিশ্রামাগার’ বা ওয়েটিং রুম অফ হিস্ট্রি তত্ত্বটি। ইউরোপ দাবি করে রাষ্ট্র, সভ্যতা, নাগরিকত্ব, গণতন্ত্র , সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা ইত্যাদি তাদের প্রোডাক্ট। সারা দুনিয়া...